Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 10:50 pm

ভুয়া মামলা রোধে নতুন বিধি : আইন উপদেষ্টা

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভুয়া মামলা দায়ের এবং মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিকে পক্ষভুক্ত করার চেষ্টা রোধে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নতুন বিধি সংযোজিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অ্যাডভাইজার কাউন্সিলের আজকের বৈঠকের খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন। আমাদের সরকারের আমলে কিছু জিনিস নিয়ে আমরা নিজেরাই খুব বিব্রত এবং এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করার চেষ্টা করি। তেমনই একটি বিষয় হচ্ছে ভুয়া মামলা এবং আরেকটি হচ্ছে মামলায় অকারণে নির্দোষ ব্যক্তিকে পক্ষভুক্ত করে মামলা বাণিজ্য করা। এ বিষয়টি থেকে পরিত্রাণ পেতে এটি নিয়ে আমরা ভেবে দেখেছি। বাংলাদেশের ক্রিমিনাল ল’ এক্সপার্ট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির একটি বিধানে বড় একটি সংশোধনী এনেছি।’

তিনি বলেন, ১ ফৌজদারি কার্যবিধিতে যখন একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়, তখন ইনভেস্টিগেশন করতে তিন-চার বছর লাগে। এখানে শত শত আসামি থাকেন, কিছু ক্ষেত্রে এখানে মামলা বাণিজ্যও হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক)/১৭৩(অ) এই নতুন বিধানটি যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনার, এসপি বা কোনো জেলার এসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনো মামলার বিষয়ে তিনি যৌক্তিক মনে করলে ইনভেস্টিগেশন অফিসার/তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর সেই মামলার তদন্তের ব্যাপারে প্রাথমিক বা প্রিলিমিনারি ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট তার বিবেচনাবলে নিরপরাধ ও যার বিরুদ্ধে ওই অপরাধের কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই, তাদের প্রি-ট্রায়াল বা বিচার-পূর্ববর্তী স্টেজেই মামলা থেকে রেহাই দিতে পারবেন।’

ড. আসিফ নজরুল জানান, এটি কার্যকর হলে পুলিশ ও আদালত প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে এসব মামলায় গ্রেপ্তার বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। ফলে নিরপরাধ ব্যক্তিরা ভুয়া মামলা থেকে রেহাই পাবেন। তদন্ত কিন্তু থেমে যাবে না, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চলমান থাকবে। আগামীকাল গেজেট প্রকাশিত হলেই আইনটি কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত অগ্রগতি হয়েছে। একটি জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক সংস্থা ইউএনওএইচসিএইচআরের প্রধান ফলকার তুর্ক আমাদের দেশে সফর করেছিলেন। সংস্থাটি তাদের কার্যালয়ের একটি মিশন শাখা বাংলাদেশে খুলতে চেয়েছেন, এ লক্ষ্যে আলোচনা হয়েছে। তাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আজকে এ বিষয়ে একটি খসড়া সমঝোতা স্মারকের ব্যাপারে আজকের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এটি নিয়ে আরও কিছু আলোচনার পর চূড়ান্ত খসড়াটি ফলকার তুর্ককে পাঠানো হবে। তিনি তার মতামত দিলে দ্রুততম সময়ে এটি স্বাক্ষরিত হবে। এই স্মারক স্বাক্ষরিত হলে প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য অফিস স্থাপিত হবে। বাংলাদেশে যদি কোনো ধরনের গুরুতর মানবাধিকার ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের মানবাধিকার-বিষয়ক রাষ্ট্রীয় এজেন্সিগুলোর পাশাপাশি এই সংস্থাটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত একটি ধর্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, মুরাদনগরে যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, তাতে বাংলাদেশের যে কোনো সাধারণ নাগরিকের মতো আমরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধান আসামির সঙ্গে সঙ্গে যারা এই ছবি বা ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার মতো অত্যন্ত দায়িত্বহীন ও অপরাধমূলক কাজ করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ধর্ষণ-বিষয়ক আইনে সময়োপোযোগী সংশোধন এনেছি। সেটার প্রমাণ আপনারা মাগুরার ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে দেখেছেন। এই ঘটনাটির ক্ষেত্রেও আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার করব, সে বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।