ভূগর্ভস্থ পানির সংকট, বোরো আবাদ না করার পরামর্শ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে জেলা সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রতি বছর পানির স্তর নামছে। এতে আগামীতে খাদ্য উৎপাদনে চরম অনিশ্চয়তার শঙ্কা করছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। তাই ইরিধান চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এজন্য অন্য ফসল উৎপাদনের কথা চিন্তা করছেন কৃষকরা।

জেলার নাচোল উপজেলার আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান ঘরে তোলার কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ইরি ধানের বীজতলা প্রস্তুত করতে হচ্ছে। সেখানে হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তারা ইরি ধান চাষ না করতে ডিপের অপারেটর ও সংশ্লিষ্ট কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করছেন। পানির অভাবে অনেকটা ইরি ধান চাষে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এমনকি নির্দেশ অমান্য করে ধান চাষ করলে বেধে দেয়া সময়ের বেশি বিদ্যুৎ না দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

নাচোল-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের পাশে জমিতেই ধান রোদে দিয়েছেন আসলাম আলী। তিনি বলেন, আমন ধান এখনও ঘরে তুলতে পারিনি। কেটে এনে রোদে দিয়েছি। আর ইরি ধানের বীজতলা প্রায় প্রস্তুত। হঠাৎ জানতে পারলাম বিএমডিএ ডিপে (স্কিমে) জমি কম করে আবাদ করতে হবে। আগে আমি প্রতিবছর ধান চাষ করতাম ৮ বিঘা, এবার করতে হবে তিন বিঘাতে। অন্য চার বিঘাতে অন্য ফসল চাষ করা লাগবে।

নাচোল উপজেলার কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন, আমরা সারাজীবন ধান চাষ করে এসেছি। আর এই অঞ্চলে ধান ছাড়া লাভজনক তেমন অন্য কোনো ফসল উৎপাদন হয়নি। ধানই আমাদের প্রধান ফসল, যা উৎপাদন করে চলে আমাদের সংসার। আমরা বছরে তিনবার পর্যন্ত ধান চাষ করে থাকি। কিন্তু পানির সংকট বলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ধান চাষ করতে নিষেধ করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে অন্য মৌসুমি ফসল উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুত করছি।

সদর উপজেলার পলশা এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, মৌসুমি ফসল উৎপাদনে খরচ কম, লাভও কম। ধানের মতো কোনো ফসলেই লাভ হয় না। প্রচুর কষ্ট করে পরিচর্যা করেও অন্য ফসলের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনও হয় না এসব জমিতে। ইরি ধানের আবাদ কমে গেলে আমাদের কাজ কমে যাবে। তাতে অসুবিধা হবে। এতে চালের সংকট দেখা দিতে পারে।
নাচোলের খলসি এলাকার কৃষক রহমত আলি বলেন, আগে পাঁচ বিঘা জমিতে ইরি ধান চাষ করতাম। এখন পানি সংকটের কারণে দুই বিঘা করতে হবে বলছে বিএমডিএ’র লোকজন। এখন সমস্যা হচ্ছে আমাদের মালিকপক্ষ এসব জমিতে ধান চাষ না করলে জমি ফিরিয়ে নেবে বলছেন। এখন আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই এই এলাকাগুলোতে ইরি ধান না চাষ করাই ভালো। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ চাষিদের ধান চাষে নিরুৎসাহিত করে খুব ভালো করেছেন। এ জমিগুলোতে গম, ভুট্টাসহ জাতীয় ফসল চাষ করলে পানি কম লাগবে। ভালো ফলনও হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী মো. মুসাইদ মাসরুর বলেন, জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলগুলোতে দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সে পানি ধরে রাখতে এবং আগামীতে সেচ নিশ্চিত করতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানোর জন্য নেয়া হয়েছে এ ব্যবস্থা। মূলত ইরি ধান চাষ করতে ১০ থেকে ১৫টা সেচ লাগে। কিন্তু অন্য ফসল চাষ করলে একটি সেচ দিলেই হয়ে যাবে। তাই কৃষকদের অন্য ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই এলাকায় প্রতিবছর বৃষ্টির মাধ্যমে ভূগর্ভে পানি জমা হয় প্রায় ৯০০ মিলিমিটার, কিন্তু ফসল চাষে পানি প্রয়োজন ১ হাজার ৩০০ মিলিমিটার।