ভেঙে ফেলা হচ্ছে মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসী ঠেকানোর দেয়াল

শেয়ার বিজ ডেস্ক: অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ অস্থায়ী দেয়াল তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের সরকার। অ্যারিজোনা মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে ৯ শতাধিক শিপিং কন্টেইনার দিয়ে তৈরি এ দেয়াল নির্মাণ করতে অ্যারিজোনা রিপাবলিকান গভর্নর ডগ ডুসি ৮২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। আদালতের এক আদেশের পর অস্থায়ী দেয়ালটি সরিয়ে ফেলতে রাজি হয়েছে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের সরকার।

এর আগে এ দেয়াল তৈরির বিরোধিতা করে মামলা এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রতিবাদ করেন পরিবেশবাদীরা। 

এদিকে পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারী রাস ম্যাকস্পেডেন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটি আনন্দের খবর।’ তিনি বলেন, ‘গভর্নর ডুসি কন্টেইনার দিয়ে অবৈধভাবে দেয়াল নির্মাণ করে করদাতাদের হাজার হাজার ডলার নষ্ট করেছেন।’

মূলত অভিবাসীদের ঠেকাতে অস্থায়ী প্রাচীর ফেডারেল ভূমিতে বেআইনিভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে একটি মামলা দায়ের করার এক সপ্তাহ পর অ্যারিজোনা মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে রাখা শিপিং কন্টেইনারগুলোর একটি লাইন সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খবর: বিবিসি, রয়টার্স ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

অঙ্গরাজ্যটির রিপাবলিকান গভর্নরের নির্দেশে দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, এ দেয়াল অভিবাসীদের ঢেউকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে বাধা দেবে। তবে এ দেয়ালের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ দায়েরকারীরা এ যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বর্তমান রিপাবলিকান গভর্নর ডগ ডুসি গত আগস্ট মাসে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন, যাতে রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থাকে তিনি মেক্সিকোর সঙ্গে ৩৭০-মাইল (৬০০ কিমি) সীমানা বরাবর শিপিং কনটেইনারগুলোকে ব্যবহার করে ফাঁকগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের সীমান্ত এলাকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ তবে তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ যুক্তি দেয়, ‘কন্টেইনার দিয়ে তৈরি দেয়ালটি ফেডারেল জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল।’

অবশ্য ডুসি এর আগে বলেছিলেন, অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য এবং এর নাগরিকদের রক্ষা করার অধিকার তার রয়েছে। এমনকি তার কার্যালয় থেকে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ক্রমবর্ধমান সংখ্যাকে ‘অশুভ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল।

বিবিসি বলছে, গভর্নর ডগ ডুসি এ বছরের শুরুতে করোনাডো ন্যাশনাল ফরেস্টে অস্থায়ী ব্যারিয়ার নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সরকার গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দাবি করে, সাত কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীরটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা ভূমিতে ঢুকে পড়েছে।

তবে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে এক চুক্তির পর ডুসির নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বলেছে, ‘আগে নির্মাণ করা সব শিপিং কনটেইনার এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম, উপকরণ, যানবাহন ও অন্যান্য জিনিস জানুয়ারির প্রথম দিকে সরিয়ে ফেলা হবে।’

অবশ্য ওই এলাকায় কাজ করে পরিবেশ রক্ষা গোষ্ঠী সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি এ ধরনের দেয়ালের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছিল।

সংস্থাটি দাবি করেছে, কন্টেইনারের প্রাচীরটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সংরক্ষিত বনকে বিভক্ত করেছে, যা হুমকির মুখে থাকা প্রাণীদের আবাসস্থল এবং পানীয় জলের উৎস ও অভিবাসন রুটগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে।

ডুসি অ্যারিজোনার গভর্নরের দায়িত্ব ত্যাগ এবং তার ডেমোক্র্যাটিক উত্তরসূরি কেটি হবসের দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহ আগে দেয়ালটি ভেঙে ফেলার কথা ঘোষণা করা হলো।

উল্লেখ্য, অ্যারিজোনার সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মেক্সিকোর ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে এই সীমান্তের এক বিশাল অংশে ওই দেয়াল তৈরি করা হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতির মূল বিষয়