অপরিকল্পিত ২৯ সেতু-কালভার্ট

ভৈরব নদ খননকাজের কোন সুফল পাবেনা যশোরবাসী

ভৈরব নদের উপর অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত রাজারহাট সেতু ছবি: শেয়ার বিজ

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: ২৭৯ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ খননের কাজ শুরু হয় বিগত ২০১৯ সালে। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে নদের যশোর অংশের ৯৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৭৫ কিলোমিটারের খননকাজ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১০ কিলোমিটার অংশেরও অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে নদ খননকাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার আশা প্রকাশ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তবে, ভৈরবের উপর অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতু-কালভার্ট যেন নদের গলা চেপে ধরেছে। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এসব সেতু-কালভার্ট অপসারণ না করলে এই বিশাল মেগা প্রজেক্টের শতভাগ সুফল পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জরুরিভাবে সেতুগুলো সম্প্রসারণ না করা হলে একদিকে যেমন নদের নাব্যতা ব্যহত হবে, তেমন নৌ চলাচল সম্ভব হবেনা বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে সংকীর্ণ সেতু সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিলেও তা বাস্তবায়নে মিলছেনা সাড়া।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে যশোরের গণমানুষের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকা জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে ভৈরব খননকাজের এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নদের যশোর অংশের ৯৬ কিলোমিটার খননকাজে ৩১টি প্যাকেজে বাস্তবায়নের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। খননকাজের ব্যায় ধরা হয় ২৭৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের ঘোষণা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ভৈরব নদেও শতভাগ খননকাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও, ঠিকাদারসহ নানা জটিলতার অজুহাতে খননকাজ ৩ দফা থমকে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, নদের শহর অংশের ১০ কিলোমিটার খননকাজে ঠিকাদার জটিলতার কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। অবশেষে ২০২১ সালে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে ২০২২ এর জুন মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শহর অংশের খননকাজও চলছে পুরোদমে। আগামী জুন মাসের মধ্যে শতভাগ খননকাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তবে শেষ বেলায় প্রকল্পের সুফল নিয়ে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে ভৈরব নদের উপর নির্মিত ৫১ টি সেতুর মধ্যে ২৯ টি সেতু। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এই সেতুগুলো এখন ভৈরব নদের গলার কাটা হয়ে দেখা দিয়েছে। এগুলো সম্প্রসারণ না করলে নদের এই বিশাল মেগা প্রজেক্টের সুফল পুরোটাই বিফলে যাওয়ার শঙ্কা জোরালো হচ্ছে।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভৈরব নদের যশোর অংশের ৯৬ কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন সংস্থার নির্মাণ করা মোট ৫১ টি সেতু রয়েছে। এরমধ্যে এলজিইডি’র ২৩টি, রোডস এন্ড হাইওয়ের ৪টি, ত্রাণ ও পূর্ণবাসন অধিদপ্তরের ১৯টি, রেলওয়ের ১টি, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ১টি এবং বিএডিসির ৩টি সেতু রয়েছে। এসব সেতুর মধ্যে ২৯টি সেতু সম্প্রসারণ না করলে ভৈরব খননের শতভাগ সুফল পাওয়া সম্ভব হবেনা। তিনি বলেন, আমরা প্রকল্পের শুরু থেকেই এসব সেতুগুলো সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করে আসছি। তাদের পক্ষ থেকে আশ^স্ত করা হলেও এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। এসময় তিনি বিজয়নগর জোড়া সেতু, যশোর দড়াটানা, কাঠেরপুল, নীলগঞ্জ, রাজারহাটসহ কয়েকটি সেতুর নাম উল্লেখ করে বলেন, এসব সেতু সম্প্রসারণ না করলে, ভৈরবে নৌ পরিবহন চালু করা সম্ভব হবেনা।

এদিকে নদ খননের শতভাগ সুফল নিয়েও আশংকা প্রকাশ করেছেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ। তিনি বলেন, ভৈরব নদ খননের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। প্রকল্পের শুরু থেকেই আমরা দাবি করে আসছি এসব সেতু অপসারণ করার। কিন্তু আমাদের দাবিকে উপেক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড একতরফাভাবে খননকাজ অব্যাহত রেখেছে। এখন শেষ পর্যায়ে এসে আমাদের দাবির সাথেই তারা একমত হয়েছে।

এ ব্যাপারে এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.কে.এম. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘রাজারহাট সেতুটি ছিলো মাত্র ১২ মিটার। যশোর অঞ্চল গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আমরা সম্প্রতি রাজারহাটে ৭২ মিটার সেতুর একটি অনুমোদন পাই। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগ করি। ঠিকাদার নিয়োগ করে যখন লে-আউট নিতে যাই, তখন সেতুর একপাশে কিছু দোকানপাট আমরা পাই সে দোকানগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্যমতে এটা নদীর যায়গা। পরবর্তিতে আমরা এটা নিয়ে জেলা প্রশাসকের স্মরণাপন্ন হই। উনার মাধ্যমে আমরা অচিরেই সমস্যা সমাধান করে সেতুর কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি।