ভোক্তা যেন চিনির শুল্ক প্রত্যাহারের সুফল পায়

আসন্ন রমজানে বাজারে দাম স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চিনি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রোববার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ৩০ মে পর্যন্ত আমদানিকারকদের বিনা শুল্কে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি খালাস করার সুবিধা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতি টন চিনি আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি তিন হাজার টাকা, সংরক্ষণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর চার শতাংশ। সব মিলিয়ে চিনি আমদানি শুল্ক পড়ে প্রায় ৬১ শতাংশ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, ১০০ টাকার চিনির দাম পড়ে আমদানিশুল্কসহ ১৬০ টাকা। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে তা ১০০ টাকাই পড়বে। অবশ্য এর সঙ্গে যোগ হবে ভাড়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয়। তবু চিনির দাম অনেক কমবে বলেই ধারণা। কিন্তু চিনির দাম কি সেভাবে কমবে! এখানে কি কারসাজি হবে না?

রমজানে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং দাম স্থিতিশীল রাখার কথা বলে চিনি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। হয়তো সরবরাহ ঠিকই থাকবে কিন্তু এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দাম স্থিতিশীল থাকবে কি না। প্রতিবারের মতো এবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় আমদানি, সরবরাহ পরিস্থিতি ও বাজারমূল্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। আমরা জানি না, বাজার তদারকি করা হবে কি না এবং মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির প্রয়াস দৃশ্যমান হলে প্রতিকারমূলক কী ব্যবস্থা নেয়া হবে। চিনির দাম কমার জন্য শুল্ক প্রত্যাহারই যথেষ্ট নয়। কেননা সংঘবদ্ধ হয়ে নানা যুক্তি খাড়া করবে আমদানিকারকরা।

এবার একটি যুক্তি আছে বটেÑডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারা। এ পরিস্থিতিতে চিনি আমদানিতে শুল্কহার যৌক্তিকীকরণের জন্য এনবিআরকে সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সংস্থাটিকে চিঠিও দেয়া হয়। প্রশ্ন হলো, তাহলে কি অযৌক্তিকভাবে শুল্ক আরোপ করে! চিঠি পেয়েই আমদানিতে শুল্ক তুলে নিল এনবিআর। রমজানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চিনির চাহিদা বেশি থাকে; এটি নতুন নয়। এ সময়ে এসেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুল্ক যৌক্তিকরণের বিষয়টি অনুধাবন করল। কয়েক মাস ধরে চিনির বাজারে অস্থিরতা চলছে। নিয়ন্ত্রিত সরবরাহের কারণে বাজারে পণ্যটির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কৌশলী ব্যবসায়ীরা মোড়কজাত চিনি খোলা চিনি হিসেবে বিক্রি করেছেন বেশি মুনাফা পেতে।

গত বছরও তেল, চিনি ও ছোলার ভ্যাট ‘প্রত্যাহার’ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। কারণ ছোলা আমদানিতে কোনো শুল্ককর আগে থেকেই ছিল না। চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তখন বলেছে; ভ্যাট ছাড় দেয়ায় ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। অথচ ভ্যাট কমলে ব্যয় কমার কথা। তারা এবার কোন অজুহাত দেখান; তা সময়ই বলে দেবে। শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি টিসিবিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এটি করা হলে টিসিবির মাধ্যমে বাজারে সঠিকভাবে পণ্য বিতরণ সম্ভব এবং তখন সংঘবদ্ধ চক্র দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরাসরি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই সংঘবদ্ধভাবে পণ্য মজুতের কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা রোধ করতে হবে। ভোক্তারা যেন শুল্ক প্রত্যাহারের সুফল পান, সে লক্ষ্যে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিতে হবে।