ভোগান্তিতে বিনিয়োগকারী নতুন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে ঝুঁকি!

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে আসা নতুন কোম্পানি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বেশি থাকে। বিশেষ করে বছর শেষে কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দেবে এ প্রত্যাশা নিয়ে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়ান সব ধরনের বিনিয়োগকারী। তবে সম্প্রতি নতুন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বেকায়দায় পড়ছেন তারা। উচ্চ দরে নতুন কোম্পানির শেয়ার কিনে এখন এর মাশুল দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

বর্তমানে বাজারে আসা নতুন বা এন ক্যাটেগরির কোম্পানির সংখ্যা আটটি। নানা খাতের এসব কোম্পানি বাজারে আসার পর এগুলোর শেয়ারদর ছিল চড়া। এখন সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর নিম্নমুখী রয়েছে। অন্যদিকে বহুল আলোচিত কোম্পানি রবি প্রথম বছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ফলে নতুন কোম্পানি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। এর জের ধরে কমে গেছে এসব কোম্পানির শেয়ারদর। ফলে যারা উচ্চদরে শেয়ার কিনেছিলেন তাদের চিন্তা আরও ভারি হচ্ছে।

বাজারে বর্তমানে যে নতুন আট কোম্পানি রয়েছে সেগুলো হচ্ছেÑক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, ইজেনারেশন লিমিটেড, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, রবি আজিয়াটা, তাওফিকা ফুডস, মীর আক্তার, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ও লুব-রেফ।

এর মধ্যে বাজারে লেনদেন শুরুর পর ১০ টাকার রবির শেয়ারের দর বেড়ে ৭৭ টাকা ১০ পয়সায় চলে যায়। শেয়ারটির দর আরও বাড়বেÑএমন গুজব থাকায় উচ্চদরে এই শেয়ার কেনেন অনেকে। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ না দেয়ায় এর শেয়ারদর কমতে থাকে। সবশেষ এ শেয়ার ৪৯ টাকা দরে কেনাবেচা হয়। অন্যদিকে এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের শেয়ারদর তালিকাভুক্তির পর বেড়ে ১০১ টাকা ৮০ পয়সায় চলে যায়। এই কোম্পানিটি নিয়েও বাজারে গুজব ছিল, দর ২০০ টাকায় চলে যাবে। ফলে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী না বুঝে উচ্চদরে এ কোম্পানির শেয়ার কেনেন। সবশেষ এ শেয়ার বিক্রি হয় ৪৯ টাকায়।

অন্যদিকে বিমা খাতের ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দর বেড়ে সর্বোচ্চ ৫৭ টাকা ৫০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। দর কমে এই শেয়ার এখন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৬ টাকায়। একইভাবে তালিকাভুক্তির পর এক্সপ্রেস

ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হতে দেখা যায়। এখন এ শেয়ার ২৫ থেকে ২৬ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।

এদিকে বাজারে নতুন আসা আরেক কোম্পানি মীর আক্তার। তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে আসার পর দর বেড়ে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় চলে যায়। পরবর্তীকালে ধারাবাহিকভাবে দর কমতে থাকে। গতকাল সর্বশেষ এ শেয়ার লেনদেন হয় ৭৮ টাকা ৮০ পয়সায়।

বিষয়টি নিয়ে আালাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজারে কোনো কোম্পানি এলে ওই কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক। যে কারণে এ ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চান তারা। ফলে দরটাও একটু বাড়তি থাকে। এভাবে অনেক সময় শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে যায়। তখন এই শেয়ার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। তাই সবার এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, কোম্পানি নতুন হোক বা পুরোনো, সেটা বিষয় না। এই ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা কেমন তার ওপর। সম্প্রতি বাজারে আসা একটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কোম্পানির শেয়ার কোনোভাবেই ৪০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। অথচ বিনিয়োগকারীরাই শেয়ারটি অতিমূল্যায়িত করে ফেলেছেন। এখন তারাই এর মাশুল দিচ্ছেন। একটু হিসাব করে বিনিয়োগ করলে আজ তাদের এসব নিয়ে ভাবার দরকার হতো না।