Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 11:33 am

ভোজ্যতেলের দর সমন্বয়ে ব্যবস্থা নিন

বিশ্ববাজারে কমলেও আমাদের দেশে কোনো পণ্যের দাম কমে না। অথচ বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে সরকারি সিদ্ধান্ত আসতে একটু দেরি হলে তর সয় না, নিজেরাই দাম বাড়িয়ে দেয়। ব্যবসায়ীরা নানাভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। যেমন জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর পরিবহন মালিকরা যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চলাচল কমিয়ে দেন। যাতে দুর্ভোগের শিকার জনসাধারণ বলতে পারেন সরকার তাড়াতাড়ি কিছু করে না কেন।

গত ৯ জুন জাতীয় বাজেট প্রস্তাব পেশের দিনই ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবিল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ সাত টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। অথচ এর আগেই বাণিজ্যমন্ত্রী বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার উদাহরণ টেনে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, জুনে দর সমন্বয়ে সয়াবিনের দাম বাড়বে না। ওই সময় নতুন দর অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ২০৫ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৯৯৭ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয় প্রতি লিটার ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। এর আগে ৫ মে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বেড়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

তখন দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন, পামঅয়েলের দাম বেশি। যেহেতু দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার বড় অংশই আমদানি করে মেটানো হয়, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। ভালো কথা। তারা তো লোকসান নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন না। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দর নিন্মমুখী। এখন দাম সমন্বয় নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। দাম বাড়ালে আগে কম দামে পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।

প্রশ্ন ওঠে, প্রতি মাসের শেষে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই দর নির্ধারণ করা হলে জুনের দর সমন্বয়ে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হলো কীভাবে। এখানে কি ভোক্তার স্বার্থ দেখা হয়েছে? জুনের দর সমন্বয়ে পাম অয়েলের দাম লিটারে ১৫ টাকা কমানো হলেও বাজারে কেন তার প্রভাব নেই?

বর্তমানে তেলের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই। গত দুই মাস বিশ্ববাজারে নি¤œমুখী সয়াবিন ও পাম অয়েলের দর নিন্মমুখী। একদিকে বিশ্বব্যাপী সয়াবিন, পাম অয়েলের উৎপাদন বাড়ছে। পামচাষিদের বিরোধিতায় রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ইন্দোনেশিয়া। শুধু তা-ই নয়, রপ্তানি স্বাভাবিক করতে রপ্তানি নীতিমালাও শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

যখন বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিন্মমুখী, আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমাদের ভোক্তারা তার সুফল পাচ্ছেন না। বিশ্ববাজারে এখন সয়াবিন, পাম অয়েলের দর নি¤œমুখী হলেও দেশের তেল কোম্পানিগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বোঝাচ্ছে যে, তেল আমদানি খরচ বেশি পড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও তা মেনে নিচ্ছে। এ পদ্ধতি জনবান্ধব নয়। যাচাই করেই সয়াবিনের দর সমন্বয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে আগামী মাসেই ভোজ্যতেলের দাম কমবে। ইদানীং একটি কথা খুব শোনা যায়, ‘দর সমন্বয় করলে প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যায়’। আমাদের দেশে শুধু আশা করলেই সুফল মিলবে না। মজুত, সরবরাহ নজরদারি করতে হবে, আইনের লঙ্ঘনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।