ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হোক

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলে দেশের বাজারেও তা কমে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় এবং ইন্দোনেশিয়া রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। গত ২ জুন বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, মে মাসের তথ্য নিয়ে পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা করা হবে। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমন্বয় করলেও নতুন দামের প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে সময় লাগবে এক থেকে দেড় মাস। এরপর ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয়ের পর দেখা গেল লিটারপ্রতি দাম মাত্র সাত টাকা কমেছে। অবশ্য দেশের বাজারে দাম সমন্বয়ের প্রভাব এখনও দৃশ্যমান নয়।

গতকালের শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদন ‘সয়াবিন তেল: বিদেশে লিটার ১২৪ টাকা, দেশে ১৯৯ টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠক তথা ভোক্তাদের হতাশ করবে বলেই ধারণা।

প্রতিবেদন বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম দুই মাসের ব্যবধানে কমেছে ৩২ শতাংশ এবং পাম তেলের দাম কমেছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। বর্তমান দর অনুসারে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১২৪ টাকা এবং পাম তেলের দাম ৭১ টাকা। অথচ দেশের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এখন লিটারপ্রতি ১৯৯ এবং খোলা পাম ১৫৪ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে দামের চেয়ে বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের দাম বেশি। এতে প্রতীয়মান হয়, ভোজ্যতেলের দাম যথানিয়মে সমন্বয় করা হয় না। এতে লাভবান হন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোক্তা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির খবর পেলেই আমাদের  দেশে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে তারা দাম কমান না। বরং সমন্বয়ের উদ্যোগ দীর্ঘায়িত করার তালে থাকেন, নানা অজুহাত খাড়া করেন।

গত ৯ জুন ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবিল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ সাত টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। অথচ এর আগেই বাণিজ্যমন্ত্রী বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার উদাহরণ টেনে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, জুনে দর সমন্বয়ে সয়াবিনের দাম বাড়বে না।

ওই সময় দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেশি। যেহেতু দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার বড় অংশই আমদানি করে মেটানো হয়, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। পড়েছেও। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরও কমেছে। অথচ দাম সমন্বয় নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না।

আমরা মনে করি, বর্তমানে তেলের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই। গত দুই মাস বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম নি¤œমুখী। বিশ্বব্যাপী সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন বাড়ছে। আর রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ইন্দোনেশিয়া। রপ্তানি স্বাভাবিক করতে রপ্তানি নীতিমালাও শিথিল করেছে দেশটি। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে আর আমাদের আমদানিকারকদের খরচ নাকি বাড়ছে। এটি দুঃখজনক। জনস্বার্থে বাজার যাচাই করেই ভোজ্যতেলের দর সমন্বয়ে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।