ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যবস্থা নিন

সয়াবিন তেলসহ নিত্যপণ্যের দুর্মূল্যে ভোক্তাসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভোজ্যতেলের ঘাটতি না থাকলেও ডিলারদের কারসাজিতে বাজারে সয়াবিন তেলের ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরি হয়েছে। তেলের দাম বাড়ার এ আশায় মজুদ করে রাখছেন অনেক ব্যবসায়ী। মজুদ করে রাখা ঠেকাতে কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি)। অভিযানে জরিমানা করা হয়েছে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীরা দুষছেন উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানকে। তারা বলছেন, কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। তেলের দাম আরও বাড়বে সম্ভাবনায় নতুন করে তেল দিচ্ছে না। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করছে, চাহিদার তুলনায় দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, সয়াবিন মিলার, আমদানিকারক কোম্পানি এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা মিলে তেল মজুদ করে রাখায়ই মূলত খুচরা পর্যায়ে তেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। আমরাও ডিএনসিআরপি’র বক্তব্যের সঙ্গে একমত।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের যে দাম বেড়েছে বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রভৃতির কারণে দাম বাড়লে তার প্রভাব দেশের বাজারে আরও দুই মাস পড়ে পড়বে। কিন্তু এখন তেল নিয়ে যে অস্থিরতা চলছে, তা সরবরাহ শৃঙ্খলের কারসাজি বলেই প্রতীয়মান। ভোজ্যতেল আমদানিকারক বাজারজাতকারী প্রভাবশালী কিন্তু সরকারের চেয়ে শক্তিধর নয়। সরকার কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে দাপট দেখাতে পারবে না।

সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল গঠন এবং নীতিমালা তৈরি করতে রোববার হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।

সাধারণত ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন, সরিষা, পাম, সূর্যমুখী, রাইস ব্র্যানসহ বাজারে বিভিন্ন তেল পাওয়া গেলেও সহজলভ্য ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় সয়াবিন তেল। সাধারণ মানুষের আয় কম, সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধিতে তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। নিজেদের রান্নায় সাশ্রয়ের কথা ভাবলেও চাইলেই তেলের ব্যবহার কমিয়ে ফেলা যাচ্ছে না। ফলে খরচও কমছে না। নিরুপায় হয়ে মাসের সংসার-খরচ কমাতে অন্য ব্যয় কমাতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্যে ঘষামাজা, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির প্রবণতা বেড়েছে। সরকারের দাবিমতো বাজারে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। তাই স্বীকার করতে হবে, ঘাটতি না থাকলেও কারসাজি রয়েছে। কৃত্রিম সংকটে যাদেরই সংশ্লেষ রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তারা আস্কারা পেলে সুযোগ পেলেই ঘোঁট পাকাবে। তাই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তেলের আমদানি, বিক্রি ও মজুদের হালনাগাদ তথ্য প্রতি সপ্তাহে যাচাই করতে হবে। সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে, দাম ও মজুতে কারসাজি বন্ধে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে তদারকি জোরদার করতে হবে।