ভোটের উত্তাপে সরগরম রাজধানীর মৌলভীবাজার

নজরুল ইসলাম: মসলার ক্রেতা বেড়েছে। কারণ কভিড-১৯ পরিস্থিতি অনেকটা শিথিল। বিয়ের আয়োজনও চলছে সবখানে। এছাড়া শীতের মৌসুমে আরও নানা উৎসব হয়ে থাকে। তাই এ সময় মসলার বিক্রিও বেড়ে যায়। কথাগুলো বলছিলেন পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের নজরুল স্টোরের রনি। মৌলভীবাজারে শুধু মসলা নয়, চিনি ও তেলের পাইকারি ব্যবসাও রয়েছে। এছাড়া কসমেটিকস ও বেকারি আইটেমসহ নানা ধরনের ব্যবসা রয়েছে এখানে।

মৌলভীবাজার ঘুরে সে চিত্রই পাওয়া গেল। ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত বিক্রিতে। ক্রেতাদের নানা পদের মসলা দিচ্ছেন তারা। শুধু কি মসলার গরম! সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোটের উত্তাপও। শিগগির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হতে যাচ্ছে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতিতে। সবমিলে সরগরম অবস্থা। আগামী ৩ ডিসেম্বর সমিতির এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) ও ইজিএম (বিশেষ সাধারণ সভা) এবং পিকনিক হবে। সেখানে ৩ হাজারের বেশি সদস্য অংশ নেবেন। লঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে এসব আয়োজন। সেখানে নির্বাচন পরিচালনা পরিষদ নিয়োগ করা হবে। তারপর ঘোষণা আসবে নির্বাচনের। তফসিল ঘোষণা হবে। নির্ধারণ করা হবে ভোটের তারিখ। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মৌলভীবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শুরু করেছেন। পিকনিকের দাওয়াতপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন ভোটারদের দোকানে-দোকানে গিয়ে। সবমিলে উৎসবমুখর পরিবেশ। এর সঙ্গে বিক্রি-বাট্টাও বেশ। ব্যবসায়ীরা জানান, শীত মৌসুম হওয়ায় কাজুবাদাম ও কাঠবাদামের বিক্রি বেড়ে গেছে।

আর দাম বেড়েছে ভারতীয় জিরার। এখন কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। ১০ দিন আগে ছিল ২৭০ টাকা। তুরস্ক থেকে আসা জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪১০ টাকায়। ১০ দিন আগে ছিল ৪০০ টাকা। আফগানি জিরার কেজি ৪০০ টাকা, যা কয়দিন আগে ছিল ৩৯০ টাকা। তবে দেশে এখন ইরানি জিরা আমদানি হয় না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ আফগানি জিরাকে ইরানি জিরা বলে বিক্রি করেন।

২৪ নভেম্বর বাজারদর অনুযায়ী, মানভেদে এলাচের কেজি ১ হাজার ৮৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করে মেসার্স হেদায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্স। মসলার এ পাইকারি দোকানে লবঙ্গ কেজি ৯৬০, দারচিনি ৩২০ থেকে ৩৮০, কিশমিশ ২৮০ থেকে ৩৬০, কালো গোলমরিচ ৫৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

নজরুল স্টোর থেকে জানানো হয়, জাফরানের দাম সবচেয়ে বেশি। ইরানি জাফরান প্রতি গ্রাম ১০০ টাকা। কেজি ১ লাখ। স্পেনের জাফরান গ্রাম ২৬০ টাকা। কেজি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে ভারতের কাশ্মীরি জাফরান সবচেয়ে দামি।

 প্রতি গ্রাম ৩৮০-৪০০ টাকা। কেজি ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।এছাড়া ২৪ নভেম্বর বাজারদর অনুযায়ী নজরুল স্টোরে কুমড়ার বিচির কেজি ৮৫০, তরমুজের বিচির কেজি ৩৫০, আখরোটের কেজি ৩৫০, আমেরিকান ত্বিনের কেজি ৬৮০, সূর্যমুখীর বীজের কেজি ৫০০ ও সিয়াসিডের কেজি ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ইরানি কিশমিশের কেজি এখন ২৮৫ টাকা। ১০ দিন আগে ২৩০ টাকা ছিল বলে জানান নজরুল স্টোরের রনি।

২৪ নভেম্বরের বাজারদর অনুযায়ী বাণিজ্য বিতানের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের লুজ (খোলা) সয়াবিন প্রতি মণ ৫ হাজার ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মেঘনার ফ্রেশ ব্র্যান্ডের লুজ (খোলা) সয়াবিন প্রতি মণ ৫ হাজার ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পামওয়েল প্রতি মণ ৫ হাজার ৬০ টাকা ও সুপার ৫ হাজার ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চীনের দর জানতে চাইলে বাণিজ্য বিতানের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, পাইকারি দর প্রতি কেজি ৭১ দশমিক ৭০ টাকা। ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার ৫৮৫ টাকা।

চিনির পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ও সিটি গ্রুপের তীর চিনির চাহিদা বেশি। তেল-চিনির বাজারদর প্রতিদিনই ওঠানামা করে বলে জানান এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ‘আগামী ৩ ডিসেম্বর আমাদের এজিএম-ইজিএম। এসব নিয়ে ব্যস্ত আছি। তাই বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বলতে পারছি না।’

চিনির বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলেÑবাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ও বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আলী ভুট্টু বলেন, ‘চিনির দাম এখন কমতির দিকে। পাইকারি দর প্রতি কেজি ৭১ দশমিক ৭০ টাকা।’

বাজারে চিনির চাহিদা পূরণে কোন কোম্পানি লিড দিচ্ছেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটি গ্রুপের উৎপাদন বেশি। তারপর রয়েছে মেঘনা গ্রুপ ও ঈগলু। এছাড়া দেশবন্ধু ও এস আলম গ্রুপের চিনিও রয়েছে।’