Print Date & Time : 9 September 2025 Tuesday 7:05 pm

ভোটে খেলাপিদের ছাড়ের প্রস্তাবে আপত্তি ব্যাংক ও সেবা সংস্থার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণ ও বিলখেলাপিদের জন্য নির্বাচন করার পথ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ছাড়পত্রের বাধা তুলে দিতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে ব্যাংক ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা তাতে একমত হতে পারেননি। গতকাল নির্বাচন ভবনে বিভিন্ন ব্যাংক ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আলোচনায় যেহেতু আপত্তি এসেছে, এ অবস্থায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হবে কি না‘আরও চিন্তা করে’ পরে সে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরপিও অনুযায়ী, ঋণ ও বিলখেলাপিরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পুনঃতফসিল বা বিল পরিশোধ করতে হয় প্রার্থীদের। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর প্রতিবেদনে যারা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হন, তারা আর ভোট করার সুযোগ পান না।

আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ওই নিয়ম শিথিল করে খেলাপিদের ভোট করার পথ সহজ করতে চেয়েছিল ইসি। কমিশন প্রস্তাব দিয়েছিলÑখেলাপি হওয়ার কারণে কারও বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, তিনি ভোটে অযোগ্য হবেন। সিআইবি প্রতিবেদনের বিধান আর থাকবে না।

কিন্তু গতকাল সোমবার কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সেবা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা বলেছেন, কারও নাম সিআইবি প্রতিবেদনে খেলাপি হিসেবে এলেই তাকে খেলাপি হিসেবে গণ্য করে ভোটে অযোগ্য করা উচিত। বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিধান বহাল রাখারই পক্ষে তারা। কয়েকটি ব্যাংক, সেবা সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ১৪ জন প্রতিনিধি এ আলোচনায় অংশ নেন।

সভা শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অধিকাংশরাই বলেছেন, ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে এখন যে বিধান রয়েছে তা থাকলেই ভালো হয়। আমরা যেটা প্রস্তাব করেছিলামÑএটাতে তারা খুব কমফোর্টেবল ফিল করেন না।’ তিনি জানান, ‘সত্যিকারের যারা খেলাপি নন’ তারাও বর্তমান নিয়মের কারণে অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। ভোটে দাঁড়ানোর মৌলিক অধিকার যেন কারও খর্ব না হয়, সে জন্যই তারা ভিন্ন চিন্তা করেছেন।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনের সাবেক ছাত্র হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা একটা প্রস্তাব করেছিলামÑস্পিরিটটাকে স্পষ্ট করার জন্য। ঋণ ও বিল আদায়ের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে কোর্টে, তাদের আমরা গণ্য করব ঋণখেলাপি হিসেবে। বিল না দিলে লাইন কেটে দেয়া যায়। নানা কারণে হয়তো জানেও না বিলখেলাপি হওয়ার তথ্য। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, বিলখেলাপি বলতে চাই।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা একটা ড্রাফট করেছিলাম।… যারা জেনুইন ডিফল্টার, সত্যি সত্যি টাকা লুট করার জন্য যারা ঋণ পরিশোধ করছেন না (তারা যেন অযোগ্য হন)। … ব্যাংকাররা বলছেন, যে কোনো খেলাপিই সিরিয়াস ডিফল্টার। কিন্তু আমরা দেখতে চেয়েছিলাম একটু ভিন্নভাবে।’

তিনি জানান, সভায় ব্যাংকাররা আগের বিধানের পক্ষেই মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সিআইবি থেকে যে তালিকা সরবরাহ করা হয়, তার ভিত্তিতেই ঠিক করতে হবে প্রার্থী খেলাপি কি না। এর সঙ্গে মামলা করার বিষয়টি যুক্ত করতে চাইলে তাদের আপত্তি নেই, তবে সিআইবি প্রতিবেদন রাখতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দেওয়ান রুহুল আহসান বলেন, ‘ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিআইবি রিপোর্টকে প্রাধান্য দিতে বলেছি আমরা। সেই সঙ্গে প্রচলিত আইন যদি সংশোধন করতে চায়, তাহলে ওই অংশটি (মামলা) যুক্ত করতে পারে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলা তো করা হয়। সিআইবিতে যাদের নাম থাকবে, তাদের ঋণখেলাপি বলতে হবে। মামলা করতে অনেকগুলো ধাপ থাকে। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।’

ইসির প্রস্তাবে ব্যাংকাররা রাজি কি নাÑজানতে চাইলে রুহুল আহসান বলেন, ‘আমরা অবজারভেশন দিয়েছি। সিআইবিতে যা আছে, তা থাকবে। … মামলার কথা রাখতে চাইলে পাশাপাশি বিদ্যমান বিধানও রাখতে হবে।’

ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী রশিদুর রহমান বলেন, বিলখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধানে তাদের সম্মতি নেই। বিদ্যমান বিধানই বহাল রাখার পক্ষে তারা মতামত দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ না করলেই বিলখেলাপি হয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি গ্রাহককে জানানো হয়। কিন্তু মামলা করতে গেলে সেবা প্রতিষ্ঠানের নানা ঝুঁকিও থাকে বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন) শেখ গোলাম মাহবুব, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি হেড নূর হোসাইন আল কাদেরী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্পেশাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের (ডিভিশনাল হেড) প্রধান মীর ইকবাল হোসেন, ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজিজুল হক পান্না, সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল কুদ্দুস, তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অর্থ) অপর্ণা ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বাজেট) ফারুকুজ্জামান, বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) মাজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (বিআরপিডি) মাকসুদা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ড. সীমা জামান, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ড্রাফটিং) হাফিজ আহমেদ চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন উপস্থিত ছিলেন সভায়।

সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।