ভ্যাট-ট্যাক্সের জটিলতা ও হয়রানি বন্ধের দাবি এফবিসিসিআইয়ের

ভ্যাট-ট্যাক্সের জটিলতা ও হয়রানি বন্ধের দাবি এফবিসিসিআইয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক:‘বাংলাদেশের বাজার এখন আর দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য ও মিয়ানমারকে বিবেচনার মধ্যে নিলে এই বাজারের আকার ২০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম শীর্ষ বাজার, ২০৩০ সালের মধ্যে ২৩তম শীর্ষ বাজার হবে।’ গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত বাধা ও সম্ভাব্য সমাধান শীর্ষক সেমিনারে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এসব কথা বলেন। তার অভিযোগ, কিছু খাতে ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষ করে আইনকানুনের জটিলতা, বন্দরের সমস্যাÑএসব কারণে আমাদের ভুগতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি থেকে শুরু করে বৃহৎ সব খাতে মূসক ও শুল্কের জটিলতা দূর করতে হবে। ব্যবসায়ীদের হয়রানি থেকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, নানা ধরনের জটিলতার কারণে বাংলাদেশ যেমন সহজে ব্যবসার সূচকে পিছিয়ে যাচ্ছে, তেমনি ব্যবসার খরচও বেড়ে যাচ্ছে এখানে। এ পরিস্থিতিতে অটোমেশনের বিকল্প নেই, শুল্ক বিভাগ থেকে শুরু করে রাজস্ব বিভাগ, সবখানেই এটা করা যায়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ব্যবসা সহজীকরণে কাজ করছে, ব্যবসায়ীরা এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

মাহবুবুল আলম বলেন, বিডার মতো যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সহজীকরণে কাজ করছে, তারা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতাহীন। আবার বিডার সব সেবা সহজে পাওয়া গেলেও অন্যখানে বিলম্ব হয়। এখানেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। এক দরজায় সেবা দেয়ার পরিধি বৃদ্ধি করা গেলে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ বাড়বে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের উপপ্রধান জায়ান জানোভস্কি।

জার্মান দূতাবাসের উপপ্রধান বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, নামে-বেনামে বিভিন্ন মাশুল আদায়Ñবাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে জার্মান ব্যবসায়ীদের কাছে এগুলো গুরুতর উদ্বেগ হয়ে উঠেছে। জার্মানি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক মেধাবী কর্মশক্তি থাকলেও জার্মান বিনিয়োগকারীদের জন্য এই দেশ এখনও অতটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেনি।

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান সরকার সমন্বিত চীন ও ভারত কৌশল বাস্তবায়ন শুরু করেছে বলে অবহিত করেন জার্মান মিশনের উপপ্রধান। অনেক কোম্পানি নিজেরা ঠিক করছে, কীভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়। জার্মানিতে এই নীতি চায়না প্লাস ওয়ান হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ জার্মানি উৎপাদনের নতুন কেন্দ্র খুঁজছে; চীন থেকে সরে আসতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ সেই প্লাস ওয়ান এমনকি তার চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে। কিন্তু এ মুহূর্তে জার্মান বিনিয়োগকারীরা মূলত ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে তেমন একটা অগ্রগতি অর্জন করতে না পারলেও গত দুই বছরে জার্মান বিনিয়োগ ও ব্যবসা ২০ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন জার্মান মিশনের উপপ্রধান। ভবিষ্যতে জার্মানির আরও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসবেন। অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদেরা উপস্থিত ছিলেন।