রহমত রহমান: মার্জারের ফলে এয়ারটেলের কাছ থেকে রবির পাওয়া তরঙ্গের (স্পেকট্রাম) মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল। তরঙ্গ নবায়নে বিটিআরসিকে অর্থ পরিশোধ শুরু করেছে রবি। তবে ভ্যাট ছাড়াই নবায়ন চার্জ দেয়া হচ্ছে! ভ্যাট পরিশোধে রবির সেই পুরোনো অজুহাত ‘বিটিআরসির ভ্যাট নিবন্ধন নেই’। তবে ভ্যাট ছাড়া নবায়ন চার্জ ফি নিতে রাজি নয় বিটিআরসি। তাই ভ্যাট পরিশোধ ছাড়াই তরঙ্গ নবায়ন পেতে এবার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি। তরঙ্গ নবায়ন চার্জের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৪৫৯ কোটি টাকা। এ ভ্যাট আদায়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়েছে এলটিইউ-ভ্যাট।
এমনিতে রবি-এয়ারটেল মার্জার ফি’র ওপর ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি রবি। এবার তরঙ্গ নবায়নের চার্জের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৪৫৯ কোটি টাকা। এ ভ্যাট পরিশোধ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে এলটিইউ-ভ্যাট। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ চিঠি দেয়া হয়।
এনবিআর সূত্র জানায়, এয়ারটেল ও রবি মার্জারের পরিপ্রেক্ষিতে রবি এয়ারটেলের কাছ থেকে পাওয়া ১১ দশমিক ৬ মেগাহার্জ তরঙ্গ ব্যবহার করে। এর মেয়াদ ১৯ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। রবি সেই তরঙ্গ ১০ বছরের জন্য নবায়ন করতে চায়। এ তরঙ্গ নবায়নে রবি বিটিআরসিকে মোট ৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। এর বিপরীতে প্রযোজ্য ভ্যাট ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৫৯ কোটি টাকা।
এনবিআরের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, রবির অনুকূলে তরঙ্গ নবায়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে বিটিআরসি। তবে এনবিআরের প্রাপ্য ভ্যাট পরিশোধ ব্যতীত বিটিআরসিকে অর্থ পরিশোধের কার্যক্রম শুরু করেছে রবি। এরই অংশ হিসেবে রবি উচ্চ আদালতে রিট করেছে। তবে রিট নিষ্পত্তি হয়নি। এলটিইউ বলছে, রবি ও এয়ারটেলের মার্জার ফি’র ওপর ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভ্যাট পরিশোধ করেনি রবি। যাতে ইতোমধ্যে সুদ দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। দুই বছর আগে রবি বিটিআরসিকে ভ্যাট হিসেবে দুটি শর্তযুক্ত একটি ব্যাংক দিয়েছে, যা এখনও নগদায়ন হয়নি।
রবির অজুহাত একটাই, বিটিআরসির ভ্যাট নিবন্ধন নেই। তাই তরঙ্গ নবায়নে ৪৫৯ কোটি টাকার ভ্যাট আদায়ে এনবিআর দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সে জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের নিয়োগ করা আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিবুল আলমকে রবির মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এলটিইউ বলছে, আগামী ১০ বছরের জন্য (চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০৩০ সালের ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত) রবির অনুকূলে তরঙ্গ নবায়ন করা হচ্ছে। সেজন্য তরঙ্গ নবায়নের আগেই প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে। রবি ৩ আগস্ট তরঙ্গ নবায়ন করতে আবেদন করেছে।
অন্যদিকে তরঙ্গ নবায়নে ভ্যাট পরিশোধ না করেই রবি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তরঙ্গ নবায়ন চার্জে প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করা হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার ম্যানেজার (মিডিয়া রিলেশন) আশরাফুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শনিবার ছুটি হওয়ায় রবির সব বিভাগ বন্ধ রয়েছে। তাই এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর বিটিআরসি’র সম্মেলন কক্ষে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বিটিআরসি, এনবিআর ও এলটিইউ’র মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তরঙ্গ নবায়নের বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, ‘বিটিআরসি কর্তৃক মোবাইল অপারেটর এয়ারটেল এর জন্য বরাদ্দকৃত তরঙ্গের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এ তরঙ্গ রবি কর্তৃক ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের লক্ষ্যে তরঙ্গ নবায়নের বিপরীতে ২০ ডিসেম্বর বিটিআরসিকে পরিশোধযোগ্য অর্থের বিপরীতে এনবিআরের প্রাপ্য ভ্যাট পরিশোধ না করলে বিটিআরসি হতে তরঙ্গ নবায়ন করা হবে না। বিষয়টি জানিয়ে বিটিআরসির তরঙ্গ বিভাগ থেকে রবিকে চিঠি দেবে।’ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর বিটিআরসি রবিকে চিঠি দেয়। যাতে বলা হয়, তরঙ্গ নবায়ন চার্জে প্রযোজ্য ভ্যাট এবং এয়ারটেল-রবি মার্জার ফি’র ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।
অন্যদিকে এলটিইউ বিটিআরসিকে এক চিঠিতে জানিয়েছে, এয়ারটেল-রবির মার্জার ফিতে প্রযোজ্য ভ্যাট আদায় বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মোতাবেক জানানো যাচ্ছে, বিটিআরসি এর আগে এনবিআরের পাওনা আদায় না করেই নিজস্ব পাওনার অর্থ বা পরিশোধযোগ্য অর্থ জমা গ্রহণ করেছে, যা আইনানুগ ছিল না। বর্তমানে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রাপ্য রাজস্ব জমা নিশ্চিত করেই কেবল রবির পরিশোধযোগ্য অর্থ জমা গ্রহণ করা আইনানুগ। ওই রাজস্ব জমা নিশ্চিত হলেই কেবল রবিকে এয়ারটেলের জন্য বরাদ্দ করা তরঙ্গের ব্যবহার অনুমোদন ও সচল করা বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ ভ্যাট পরিশোধ নিশ্চিত করেই যেন বিটিআরসি তরঙ্গ নবায়ন করে।
ভ্যাট পরিশোধ ছাড়াই রবি আজিয়াটা লিমিটেডের তরঙ্গ নবায়ন করা হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অফিস সময়ে কথা বলব।’
এ বিষয়ে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্জার ফিতে দুই বছর ধরে ভ্যাট দিচ্ছে না। বিটিআরসির ভ্যাট নিবন্ধন নেই বলে শর্তযুক্ত ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে। এত আলোচনার পরও টাকা পরিশোধ হয়নি। এখন তরঙ্গ নবায়ন চার্জের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ না করতে আবারও পুরোনো অজুহাত। ভ্যাট পরিশোধ যাতে না করতে হয় সেজন্য উচ্চ আদালতে গেছে। দ্রুত ভ্যাট আদায়ে ব্যবস্থা নিতে এনবিআরের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।