ভ্যাট ফাঁকিতে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স

রহমত রহমান: পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে ভ্যাট (মূসক) ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি দুই বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। এমআর ত্রুটি, এজেন্সি কমিশন, প্রতিষ্ঠানের ব্যয় আর অফিস ভাড়ার বিপরীতে এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট পরিশোধে প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রতি দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে এনবিআরের নির্দেশে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা দক্ষিণ প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন, ভ্যাটসংক্রান্ত দলিলাদি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিমা কভার নোট, এমআর ইস্যু, মূসক অব্যাহতি-সংক্রান্ত সেবা, বার্ষিক প্রতিবেদনসহ ভ্যাটসংক্রান্ত দলিলাদি উপস্থাপন করা হয়। এসব পর্যালোচনা করে ফাঁকি উদ্ঘাটন করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১ হাজার ৬৬১টি কভার নোট, ৮২ হাজার ৪৭৭ পলিসি ইস্যু ও প্রায় ১০৯ কোটি টাকার প্রিমিয়াম গ্রহণ করেছে। দুই বছরে ৩৭১টি এমআর বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ১৫৮টি ও ২০১৮ সালে ২১৩টি। এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী, এমআর বাতিলের কারণ উল্লেখ করে রিফান্ড আবেদনের বাধ্যবাধকতা থাকলে তা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ৩৭১টি এমআরের ভ্যাট বাতিলের সুযোগ নেই। দুই বছরে ৩৭১টি এমআরের ভ্যাট ৯ লাখ ৩০ হাজার ৭১৭ টাকা। দুই শতাংশ হারে সুদ দুই লাখ ২১ হাজার টাকা। সুদসহ ভ্যাট ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত এজেন্সি কমিশন দিয়েছে প্রায় ১০ কোটি ছয় লাখ টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। দুই শতাংশ হারে সুদ ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। সুদসহ ভ্যাট প্রায় দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা। রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স একটি লিমিটেড কোম্পানি। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, লিমিটেড কোম্পানির ব্যয় বা কেনাকাটার ওপর উৎসে ভ্যাট প্রযোজ্য। রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স দুই বছরে ২৬টি খাতে প্রায় ছয় কোটি সাত লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এর ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট প্রায় ৬৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানটি কিছু ভ্যাট পরিশোধ করলেও প্রায় ১৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। দুই শতাংশ হারে সুদ প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। সুদসহ ফাঁকি প্রায় ১৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দুই বছরে প্রায় তিন কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা অফিস ভাড়া পরিশোধের বিষয় উল্লেখ করে। কিন্তু মূসক দাখিলপত্রে (ভ্যাট রিটার্ন) প্রায় তিন কোটি ২৬ লাখ ২১ হাজার টাকা দেখানো হয়। বাকি প্রায় ২১ লাখ ৫৯ হাজার টাকার অফিস ভাড়া পরিশোধ দেখানো হয়নি। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রায় তিন লাখ ২৩ হাজার টাকা। দুই শতাংশ হারে সুদ প্রায় ৭২ হাজার টাকা। সুদসদ ভ্যাট প্রায় তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকা। দুই বছরে বাতিল করা এমআর, এজেন্সি কমিশন, প্রতিষ্ঠানের ব্যয় আর অফিস ভাড়ায় মোট প্রায় এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সুদসহ দুই বছরে মোট ভ্যাট ফাঁকি দুই কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ভ্যাট পরিশোধে সম্প্রতি ভ্যাট দক্ষিণ থেকে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সহিদ-উল-হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ বিষয় আমার জানা নেই। জেনে জানাতে হবে।’

উল্লেখ্য, বিমা খাতের কোম্পানি হিসেবে ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। গত নভেম্বর শেষে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে ৫০ দশমিক ১৪ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও বাকি ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। কোম্পনিটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে কর-পরবর্তী কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ছয় কোটি ১১ লাখ টাকা। ওই আর্থিক বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৫ টাকা ৩০ পয়সায়।