‘ভয়ংকর সুন্দর’ হারিয়ে যাওয়ার সিনেমা নয়: জয়া

শোবিজ ডেস্ক: অনিমেষ আইচ পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘জিরো ডিগ্রি’র অভিনেত্রী ছিলেন জয়া আহসান। ওই সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে অনিমেষের দ্বিতীয় সিনেমা ‘ভয়ংকর সুন্দর’-এ অভিনয় করেছেন আশনা হাবিব ভাবনা ও কলকাতার অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সিনেমাটি নিয়ে একটি পর্যালোচনা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন জয়া আহসান।

‘জিরো ডিগ্রি’ থেকেও ‘ভয়ংকর সুন্দর’ সিনেমাটি পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জয়া বলেন, ‘কদিন ধরে বেশ আক্রমণাত্মক লেখা পড়ছিলাম অনিমেষ আইচের ভয়ংকর সুন্দর নিয়ে। লেখাগুলো পড়ে ভয়ংকর সুন্দর দেখার তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ছবিটি আমি দর্শক সিটে বসে দেখেছি এবং দর্শক হয়ে ছবিটি উপভোগ করেছি। দর্শক একই জায়গায় হাসছে, রিঅ্যাক্ট করছে, আবার পুরো হল পিনড্রপ সাইলেন্ট হয়ে যাচ্ছে। দর্শক কমিউনিকেট করতে পারছে। কম্প্যাক্ট একটি সিনেমা। অনিমেষের প্রথম সিনেমা জিরো ডিগ্রিতে আমি কাজ করেছিলাম। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় ভয়ংকর সুন্দর জিরো ডিগ্রির চেয়েও পরিণত। জিরো ডিগ্রি দেখার পর কিছু জায়গা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছিল, কিন্তু এই সিনেমাটির ক্ষেত্রে তা মনে হয়নি।’ নির্মাতা অনিমেষ আইচের প্রশংসা করে জয়া বলেন, ‘অনিমেষ বরাবরই একজন মেধাবী, শক্তিশালী নির্মাতা। সবসময়ই সে শক্তিশালী গল্প বলার সাহস রাখে। এই ছবির মূল নায়ক বা সঞ্চালক ছবিটির গল্প। পানিবিহীন একটি দিন কল্পনা করে দেখুন তো। প্রচলিত বিষয়গুলো এড়িয়ে পানির মতো একটি বিষয়কে উপজীব্য করে ছবি তৈরির সাহস কিন্তু তিনি দেখিয়েছেন। প্রচলিত গল্প বলার ধরন থেকে আলাদা করে গল্প বলার চেষ্টাও আছে সিনেমাটিতে। একেকজন নির্মাতার আদর্শ, চিন্তা, গল্প বলার ঢং আলাদা হবেÑএটাই স্বাভাবিক। এই সিনেমাতেও আলাদা করে গল্প বলার চেষ্টা আছে। এক্ষেত্রে নির্মাতা সফল। নতুন কোনো কিছুকে বুঝতে না পারার দায় নির্মাতার নয়। দর্শকেরও নতুনকে গ্রহণের প্রস্তুতি থাকতে হবে।’

ছবিতে ভাবনা ও পরমব্রতের চরিত্র ও তাদের অভিনয়  প্রসঙ্গে জয়া আহসান নিজের ভালোলাগার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অভিনয়ের সুর, তাল, লয়Ñসব ভালো ছিল। ভাবনা, নয়নতারা চরিত্রে কনভিন্সিং। পরমের চরিত্রটা ভীষণ মায়াময় লেগেছে। পরমকে একজন আদর্শ হোটেল বয়ের মতোই লেগেছে। দুজনের ক্যামিস্ট্রি ভালো লেগেছে। অন্যরাও যে যার জায়গায় ভালো করেছে।’

তবে ছবির অনলাইন প্রচারণা ভালো লাগেনি জয়ার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লাইট, ক্যামেরা মোটামুটি। তবে টেকনিক্যালি বলতে গেলে কালার কারেকশন কনভিন্সিং নয়। আর ভালো লাগেনি অনলাইন প্রচারণা। পোস্টার প্রচারণা আরেকটু ভালো হতে পারত। অনিমেষের কাছ থেকে এটুকু আশা করতেই পারি। ছবিটির প্রথমার্ধ নিয়ে কিছু অবজারভেশন আছে, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ অবশ্যই আকাক্সক্ষা তৈরি করে।’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণের কিছু বিষয় নিয়ে জয়া আহসান বলেন, ‘আমাদের দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ কতটা কষ্টসাধ্য তা নির্মাতা বা চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিমাত্রই জানেন। এখানে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ একজন ডিরেক্টরকেই করতে হয়। নানামুখী বাধা পেরিয়ে ছবিটা আলোর মুখ দেখে। বাইরে থেকে নিন্দা-আক্রমণাত্মক কথা বলা এখানে যতটা সহজ সিনেমা নির্মাণ করা ততটাই কঠিন একটি প্রক্রিয়া। প্রতি বছর দুর্বল গল্প-অভিনয়-রিমেক গল্পের চিত্রনাট্যে প্রচুর সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। সেসব সিনেমা নিয়ে কাউকে তেমন কিছু বলতে দেখা গেল না। কিন্তু অনিমেষের এই ভয়ংকর সুন্দর নিয়ে এমন আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া আমাকে অবাক করেছে। বুঝতে পারিনি, সগোত্রীয়দের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণ কী।’ অনিমেষ আইচ ও ‘ভয়ংকর সুন্দর’  সিনেমার আরও একবার প্রশংসা করেছেন জয়া। তিনি বলেন, ‘ভয়ংকর সুন্দর-এর প্রোডিউসারও অনিমেষ আইচ। একই সঙ্গে অর্থলগ্নি ও পরিচালনা করা একটি দুঃসাহসিক কাজ। আর দ্বিতীয় ছবি বানাতে অনিমেষের তিন বছর লেগে গেল। নানা প্রতিকূলতার মাঝে দাঁড়িয়েও নিজের মতো করে গল্পটা বলতে পেরেছে, যেখানে আমরা অনিমেষ আইচকে খুঁজে পাই। চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে অনিমেষ আইচ এমন পদক্ষেপের জন্য বাহবা পেতে পারে। কিন্তু তা না করে নেগেটিভ প্রতিক্রিয়ার সংস্কৃতি চালু হলো। এটা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে কি প্রডিউসারশিপ দাঁড়াবে? তবে সময়ই সবচেয়ে বড় বিচারক। আমি মনে করি, সময়ের বিচারে ভয়ংকর সুন্দর হারিয়ে যাওয়ার সিনেমা নয়।’ অনিমেষ আইচ পরিচালিত ‘ভয়ংকর সুন্দর’ ছবিটি সারা দেশের ২৮টি সিনেমা হলে মুক্তি পায় গত ৫ আগস্ট।  ছবিটিতে ভাবনা ও পরমব্রত ছাড়াও অভিনয় করেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফারহানা মিঠু, ফারুক আহমেদ, লুৎফর রহমান জর্জ, অ্যালেন শুভ্র ও দিহান। ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন সাহা। মতি নন্দীর লেখা ছোটগল্প ‘জলের ঘূর্ণি ও বকবক শব্দ’ অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে।