নাজমুল হুসাইন: আশির দশকে খুব ছোট পরিসরে রাজধানীর মতিঝিলে চালু হয় একটি খাবারের দোকান। শরীয়তপুরের নূরু বয়াতি সেই দোকানটি চালু করেছিলেন। সময়ের বিবর্তনে এক দশকে নূরুর সেই দোকান পরিণত হয় ‘ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে’, যা দুই বছর আগেও রাজধানীর খাবারের হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল।
হোটেলটিতে প্রতিদিন হাজারও মানুষের আনাগোনা হতো। আর মুখে মুখে ঘরোয়ার ভুনা খিচুড়ির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সেভাবেই খ্যাতি নিয়ে একটানা এই হোটেল চলেছে ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু কর্মচারী খুনের ঘটনায় হোটেলটির খ্যাতি আর সুনাম ধুলোয় মিশে গেছে। সে ঘটনার জেরে এখন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ঘরোয়া।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে ঘরোয়া হোটেলের এক কর্মচারী খুন হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত হোটেলটির বর্তমান মালিক নূরু বয়াতির ছোট ছেলে আরিফুল ইসলাম সোহেল জেলহাজতে রয়েছেন। এদিকে হত্যাকাণ্ডের পরেরদিন থেকে সাময়িকভাবে ঘরোয়া হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়, যা এখন স্থায়ীভাবে বন্ধ। আদালতের নির্দেশে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর পুলিশ হোটেলটির চাবি মূল ভবন মালিকের কাছে হস্তান্তর করেছে, যা এখন আর ঘরোয়ার অধীনে চলার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আদালতের আদেশে বর্তমানে ভবনটি মালিকের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। বর্তমানে সেখানে মালিকের প্রতিষ্ঠান ‘হ্যাক সিকিউরিটিজ লিমিটেড’ কার্যক্রম শুরু করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়েক আলী চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘অনেক আগেই ঘরোয়া হোটেলের ভাড়ার চুক্তি শেষ হয়েছিল। খুনের ঘটনার পর জায়গাটি পুলিশের হেফাজতে ছিল। তবে মহামান্য আদালতের আদেশে এখন বুঝে পেয়েছি। সেখানে আমাদের সিকিউরিটিজ হাউজের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ফলে এখানে আর ঘরোয়া হোটেল চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই।’
মতিঝিল এলাকায় ঘরোয়া হোটেলের আশপাশের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে ইন্তেকাল করেন ঘরোয়া হোটেলের মূল প্রতিষ্ঠাতা নূরু বয়াতি। তবে অনেক আগে থেকেই তার ছোট ছেলে সোহেল হোটেলটি পরিচালনা করতেন। যদিও নূরু রয়াতির রাসেল নামে আরেকটি বড় ছেলে ছিল। তবে সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাইয়ের বিরোধে তিনি হোটেল ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। সম্ভবত ঘরোয়া হোটেলের মালিক ছিলেন ছোট ভাই রাসেলই। ফলে হত্যাকাণ্ডের পরপরই তিনি অভিযুক্ত থাকায় হোটেলটি বন্ধ হয়। ঘটনার পর থেকে হোটেলটি পুনরায় চালু করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হোটেলের মূল ফটকটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সামনে ব্যানারে লেখা রয়েছে: আদালতের আদেশ। ‘এই প্লটটি ভাড়া বা বিক্রি হবে না’। এমনটাই ব্যানারে উল্লেখ করেছে মালিকপক্ষ। ভেতরে বর্তমানে মালিকপক্ষের সিকিউরিটিজ হাউজের কাজ চলছে। ভেতরে গিয়ে চোখে পড়ে না ঘরোয়ার কোনো চিহ্ন। কয়েকজন জানান, সেখানে নতুন করে বহুতল ভবন তৈরি করতে চায় মালিকপক্ষ।
নববইয়ের দশকে ছোট একটি খাবারের দোকান দিয়ে শুরু হয় ‘ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ এর কার্যক্রম। অল্প সময়ের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এক সময় এই হোটেলের ভুনা খিচুড়ি ঢাকা শহরজুড়ে সুনাম অর্জন করেছিল। এখন তা শুধুই স্মৃতি। মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে মাত্র ১৫০ গজ দক্ষিণে মধুমিতা সিনেমা হল সংলগ্ন হওয়ায় হোটেলটিতে ওই এলাকার কর্মব্যস্ত হাজারও মানুষ প্রতিদিন খাবার খেতেন। এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসতেন জনপ্রিয় এ হোটেলের খাবার খেতে। হোটেলটির রাজধানীতে কোনো শাখা না থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় এখনও ঘরোয়া নামে একাধিক হোটেল চলছে। অনেকে বলছেন, ঘরোয়ার মালিকেরই কয়েকজন আত্মীয় পরে সেসব ঘরোয়া হোটেল চালু করেন।