মধুমতি নদীর তীব্র ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া জুটমিল। পাটকল কর্তৃপক্ষ নদীভাঙন ঠেকাতে খোয়া, ইট ও বস্তা ফেলছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। নদীর স্রোতে প্রতিনিয়তই ভাঙছে মধুমতির পাড়। বর্তমানে পাটকল ভবন থেকে দু-তিন ফুট দূরে অবস্থান করছে নদীভাঙন। ফলে যেকোনো মুহূর্তে পাটকলটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে পাটকলের ৩০০ শ্রমিকের বেকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। টুঙ্গিপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর সার্ভে কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দ্রæত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে ‘নদীভাঙন’ বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। কিন্তু ব্যবস্থা নিলে ধ্বংসলীলা কমবে বলেই ধারণা। নদীভাঙনে প্রকৃতির ভ‚মিকাই প্রধান। তবে নদীভাঙনে আমাদের দায়ও কম নয়। ভাঙন রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে পারলে ভাঙন রোধ করাও সম্ভব। সে জন্য সরকারকে বড় ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে। সেটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। আপাতত ভাঙনে ক্ষতি কমিয়ে আনায় মনোযোগ দিতে হবে
ভাঙনে বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হওয়ার পরও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে নদীর অবদান প্রশ্নবিদ্ধ নয়। এজন্য আমরাই আসলে দায়ী। নদীভাঙন সমস্যা এক দিনের নয়। এখন অবশ্য প্রথম ও প্রধান কাজ হবে নদীভাঙন কমিয়ে আনা। নদীভাঙন রোধে এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি। নদীতীরে অপরিকল্পিত স্থাপনা, বাঁধ প্রভৃতির কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত হলেই রণমূর্তি ধারণ করে নদী।
ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ময়লা-বর্জ্য মিশছে সেখানে। উজান থেকে নেমে আসা পলি পড়ছে নদীতে। এতে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ময়লা-বর্জ্য ফেলা বন্ধের পাশাপাশি নদী খননের ব্যবস্থা নিতে হবে। ইজারা দেয়া বন্ধ করে জলাভ‚মি রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। উচ্চ আদালত নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে। সংস্থাটি নদী দখলদারের তালিকা প্রকাশ করেছে। ওই তালিকা ধরে নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের কারণেও নদীর স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় সুনির্বাচিত স্থানে ক্যাপিটাল ড্রেজিং চালিয়ে যেতে হবে। বর্ষাকালে নদীর তলানি পানির স্রোতের মধ্যে ঘেঁটে দিতে হবে, যাতে এটা জমা না হয়ে সহজে চলে যায়।
নদীভাঙন ও প্লাবন প্রাকৃতিক হলেও এতে মানুষের ভ‚মিকাও রয়েছে। নদীনালায় ইঞ্জিনচালিত যানের পোড়া তেল, গৃহবর্জ্য, প্লাস্টিক বোতল, পলিথিনসহ অপচনশীল বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। অবৈধ দখল থেকে নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদীবন্দর সংস্কার এবং পরিকল্পিতভাবে নদীনালায় ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা জরুরি। শিল্পবর্জ্যরে দূষণ থেকে নদী রক্ষায় শিল্পকারখানায় ২৪ ঘণ্টা ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) চালু রাখা, হাওর-বাঁওড়-বিল ও পতিত নদীগুলোর উৎসমুখের বাধা সরিয়ে নি¤œভ‚মিতে জলের প্রবাহ সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।