নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে স্নাতক মর্যাদা পাওয়ার পথে রয়েছে। এটি অর্জনের জন্য দেশকে আট শতাংশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখতে হবে এবং মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার থেকে ১৩ হাজার ডলারে উন্নীত করতে হবে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মতি পূরণ করতে হবে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে সুশাসনের দিকে নজর দিতে হবে, যা এখনও বৈশ্বিক সূচকের অনেক নিচে রয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২৮তম বার্ষিক কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী বোর্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বড় স্বপ্ন পূরণের পেছনে বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশ কভিড-১৯ মহামারি থেকে বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
আইসিসিবি কার্যনির্বাহী বোর্ড চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে কিছু মূল সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলোÑমুদ্রাস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপযুক্ত আর্থিক ও রাজস্ব নীতি থাকা উচিত। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানি, এলএনজি এবং কয়লার ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকি তীব্র হয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ভর্তুকির বোঝা বাড়াচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব এড়াতে ব্যয়বহুল এলএনজিকে নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ দিয়ে প্রতিস্থাপন করার পাশাপাশি পারমাণবিক/নবায়নযোগ্য এনার্জি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের অন-শোর ও অফ-শোর উভয় অনুসন্ধান কার্যক্রমের সঙ্গে দ্রুত অগ্রসর হওয়া উচিত।
বোর্ড মনে করে, পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও আমদানি বৃদ্ধির ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টস ঘাটতি হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনা এবং এশিয়ার প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখাবে। কিছু অনুমান অনুসারে, বাংলাদেশকে বন্দর ও সড়ক নির্মাণ, পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রেললাইন স্থাপন, বিদ্যুৎ-উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা স্থাপন, অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ইউটিলিটি ও সেবাদান প্রভৃতি খাতে আগামী দশকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এক মাস বাড়ার ফলে প্রকল্পের ব্যয় শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খরচের পাশাপাশি সময় বাঁচাতে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। মোট নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) পরিমাণ গত ১০ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে তিনগুণ হয়েছে। এনপিএল সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য ব্যাংকিং সেক্টরের আরও কঠোর ঋণ নীতি এবং সেগুলো প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
কৃষি খাতের সমস্যা সমাধানে বোর্ডের পরামর্শ কৃষি খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ৭০ মিলিয়নের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা আমরা মোকাবিলা করছি এবং নতুন কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ও অভিযোজনযোগ্যতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী অভিযোজন প্রযুক্তিগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং জলবায়ু অভিযোজনযোগ্যতার দিকে আরও মনোনিবেশ করতে হবে।
বোর্ড জানায়, বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। যদিও দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানবসম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের শিল্পের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
বিআইডিএসের কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, তৈরি পোশাক (আরএমজি), হালকা প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিকস, চামড়া ও পাদুকা এবং কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো শ্রম-উদ্দীপক শিল্পে কর্মীদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। শিল্পোদ্যোগগুলো চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে আইসিসিবি বোর্ড।
আইসিসিবি কাউন্সিল ২০২২ সালের অডিটর রিপোর্ট অনুমোদন করেছে এবং ২০২৩ সালের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ করেছে।