রহমত রহমান: ব্যাংকের আমানতের সুদ থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায় সরকার। দেশের ৯৬টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে উৎসে কর আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কর অঞ্চল-১। কঠোর মনিটরিং করায় চলতি অর্থবছর এ খাত থেকে উৎসে কর কর্তনের হার বেড়েছে। শুধু ব্যাংক ও আর্থিক খাত নয় এ কর অঞ্চলের অধীনে অন্যান্য কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, এয়ারলাইনসসহ সব প্রতিষ্ঠানে কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে একইভাবে উৎসে কর্তন বেড়েছে। এছাড়া কোম্পানি ব্যতীত ব্যক্তিশ্রেণির কর আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় চলতি অর্থবছর কর অঞ্চলটি প্রথমবারের মতো ২৫ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকার কর অঞ্চলসমূহের মধ্যে কর অঞ্চল-১ গুরুত্বপূর্ণ একটি কর অঞ্চল। এ দফতরের আওতাধীন করদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সবচেয়ে বেশি উৎসে কর আদায় হয়। আয়কর আইনের ৫৩এফ ধারা অনুযায়ী দেশের ৯৬টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক আমানতের সুদের ওপর উৎসে কর্তন করে থাকে। স্থায়ী আমানত, সঞ্চয়ী হিসাব, মেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি হিসাবসহ সব আমানতের সুদের বিপরীতে উৎসে কর কর্তন করা হয়। প্রায় ৯০ ভাগ রাজস্ব আদায় হয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। ব্যাংক ছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত ২৬টি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পে-রোল ট্যাক্স আদায় করা হয়। ইউএস-বাংলা, এয়ার এশিয়া, বাংলাদেশ বিমানসহ আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী প্রায় ৩০টি এয়ারলাইনস থেকে ভ্রমণ আদায় করা হয়। এছাড়া এ কর অঞ্চলের আওতাধীন প্রায় লক্ষাধিক করদাতা রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কর অঞ্চল-১ এর আয়কর লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা আট হাজার ৪৮১ কোটির বিপরীতে আদায় হয়েছে সাত হাজার ১২৫ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর আট হাজার ৪৮১ কোটির বিপরীতে আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৩১ কোটি আট লাখ টাকা। এ অর্থবছর ঘাটতি ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৯ হাজার ৩৫ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত চার অর্থবছর গড় প্রবৃদ্ধি চার দশমিক ৬৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর (২০১৭-১৮) লক্ষ্যমাত্রা সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিপরীতে মে মাস পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকায় আদায়ে হয়েছে, যাতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জুন পর্যন্ত আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো এ দফতরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশের বেশি হতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছে, যা এ দফদরের রাজস্ব আহরণ ও প্রবৃদ্ধির সর্বোচ্চ রেকর্ড। টিমওয়ার্ক আর কঠোর তদারকির ফলে তা সম্ভব হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। মে পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে উৎসে কর আদায় হয়েছে চার হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ৮০২ কোটি টাকার উৎসে কর আদায় হয়েছে। উল্লেখ্য, সব ডিপোজিটের ওপর ই-টিআইএন থাকলে ১০ শতাংশ ও না থাকলে ১৫ শতাংশ এবং বিভিন্ন আমানতের ওপর পাঁচ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
কর অঞ্চল-১ এর রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির বিষয়ে একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ দফতর সর্বোচ্চ উৎসে কর তথা রাজস্ব আদায় করে। সে জন্য এ খাতের উৎসে কর কর্তন বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উৎসে কর্তনে নজর দেওয়া হয়। খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশেষ কর্মশালা, প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। উৎসে কর কর্তন মনিটরিংয়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ছয়টি তদারকি টিম গঠন করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতিদিন টিম ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হানা দিচ্ছে। এছাড়া উৎসে কর রিটার্ন দাখিল মনিটরিং করার ফলে আদায় আগের চেয়ে বেড়েছে। কঠোর মনিটরিং, বকেয়া দাবি আদায় কার্যক্রম জোরদার, কাজে গতিশীলতা আনায়ন, করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করা এবং কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে প্রথমবারের মতো এ দফতরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
