হাফিজ জুট মিলের লিজ ভাড়া পরিশোধ

মন্ত্রণালয় দিল এক মাস সাদ মুসা চায় ছয় মাস

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বেসরকারি খাতে প্রথম দফায় বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) দরপত্রের মাধ্যমে চারটি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে হাফিজ জুট মিল পেয়েছিল দেশের ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপি শিল্পগ্রুপ সাদ মুসা। এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাদ মুসা ফেব্রিক্স লিমিটেড। এ মিলের লিজ মূল্য ১৫ কোটি ৭৭ লাখ ছয় হাজার ৬৬৪ টাকা। এর মধ্যে সাদ মুসা গ্রুপ মাত্র ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি ১৫ কোটি ২৭ লাখ ছয় হাজার ৬৬৪ টাকা পরিশোধে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চায়। অপরদিকে মন্ত্রণালয় এক মাসের মধ্যে পরিশোধে সময় দিয়েছে। 

পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের এপ্রিলে সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি পাটকলের মধ্যে ১৭টিকে বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য বিজেএমসি একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়ন করে, যাতে স্থানীয়, বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আহ্বান জানায়। এরপর দুটি ভারতীয় ও একটি ব্রিটিশসহ মোট ২৪টি সংস্থা ১৪টি মিলের বিপরীতে ৫৯টি প্রস্তাব জমা দেয়। এতে খুলনার তিনটি মিলের জন্য বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। আর ছয় মাসেরও বেশি সময় দরপত্র প্রক্রিয়ার পর বিজেএমসি পাঁচটি পাটকল ইজারা দেয়ার জন্য মাত্র পাঁচটি বেসরকারি কোম্পানিকে চূড়ান্ত করে।

এ পাঁচটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলোÑচট্টগ্রামের ইউনিটেক্স গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, মিমু জুট মিলস, জুট অ্যালায়েন্স লিমিটেড, বে গ্রুপের যৌথ উদ্যোগ এবং যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক। কিন্তু বিদেশি কোম্পানি ২৪ মাসের অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ করে ইজারা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাই বিজেএমসি শেষ পর্যন্ত চারটি মিল লিজ দেয়। চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের পর জুট অ্যালায়েন্স লিমিটেড নরসিংদীতে বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড এবং ইউনিটেক্স গ্রুপ চট্টগ্রামে কেএফডি জুট মিলস ইজারা পায়, যার মেয়াদ ২০ বছর। এর মধ্যে দুটি মিল এরই মধ্যে উৎপাদনে চলে আসে। বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান বিজেএমসির সঙ্গে এখনও ইজারা চুক্তি চূড়ান্ত করেনি।

সাদ মুসা গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাদ মুসা ফেব্রিক্স লিমিটেড পেয়েছে হাফিজ জুট মিল। এ মিলের লিজ মূল্য ১৫ কোটি ৭৭ লাখ ছয় হাজার ৬৬৪ টাকা। এর

মধ্যে সাদ মুসা গ্রুপ মাত্র ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করে। বাকি ১৫ কোটি ২৭ লাখ ছয় হাজার ৬৬৪ টাকা পরিশোধে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চায়।

এ বিষয়ে পাটমন্ত্রী বরাবর গত ১৯ জুন একটি চিঠিতে সময় বাড়ানোর আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন। এ চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, করোনা-সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক পড়েছে। আর ঈদুল আজহায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের চাপ, সরবরাহতারীদের পাওনা পরিশোধের চাপ, ইউলিটিলিটির পরিশোধের চাপসহ বিভিন্ন কারণে স্বপ্ল সময়ে ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এসব কারণ বিবেচনায় নিয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ লিজ মানি পরিশোধের জন্য সময় দরকার।   

এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো আব্দুর রঊফ শেয়ার বিজকে বলেন, সাদ মুসা ফেব্রিক্স ২৪ মাসের ভাড়া পরিশোধে সময় চেয়েছিল। আমরা আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করতে না পারলে আমরা নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড বাতিল বলে গণ্য করব। তখন হয়তো আবার টেন্ডার আহ্বান করতে হবে। তিনি সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলেন। একই সময়ে বরাদ্দ পাওয়া দুটি জুট মিল বেসরকারি উদ্যোক্তারা চালু করেছে। অথচ বড় দুইটি মিল এখনও চালু হলো না। এ সময় ভালো কিছু আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ছিল। 

এ বিষয়ে জানার জন্য সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিনের সঙ্গে একাধিকবার তার ব্যবহƒত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে পোশাক খাত দিয়ে ব্যবসা শুরু করে সাদ মুসা গ্রুপ এবং মোহাম্মদ মহসিন চট্টগ্রাম ফেব্রিক্স বোর্ড লিমিটেড, সাদ মুসা ফেব্রিক্স লিমিটেড, এমএ রহমান ডায়িং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, সাদ মুসা হোম টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লথিং লিমিটেড, দেশ কম্পিউটার, মার্স অটোমোবাইলস, সাদ মুসা হাউজিং কমপ্লেক্স লিমিটেড, হাসনি বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, আল মুস্তফা ইন্ডস্ট্রিজ লিমিটেড, আহমদি অয়েল মিলস লিমিটেড, ক্রিসেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রোকেয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এমদাদ এতিমিয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সুলতান হাবিবা ফেব্রিক্স লিমিটেড, মাহমুদ সাজিদ কটন মিলস লিমিটেড, সায়মা সামিরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী জুট ট্রেডিংসহ একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।