সিইও’র প্রত্যাশা

মন্দায়ও প্রবৃদ্ধি বাড়বে রায়ানএয়ারের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলেও প্রবৃদ্ধি বাড়বে আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সাশ্রয়ী বিমান সংস্থা রায়ানএয়ারের। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনই জানিয়েছেন সংস্থা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ও’লিয়ারি। খবর: বিবিসি।

অতি কম খরচে বিমান ভ্রমণের সুযোগ দেয় রায়ানএয়ার। ইউরোপের নানা লো কস্ট এয়ারলাইন্স বা অত্যন্ত সাশ্রয়ী বিমান সংস্থার উড়োজাহাজ এটি। দীর্ঘদিন ধরে মাত্র ১০ ইউরোতেও উড্ডয়নের সুযোগ দেয়। তবে গত মাসের মাঝামাঝি মাইকেল জানান, জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে রায়ানএয়ার এখন থেকে আর সর্বনিন্ম দামে বিমানে ভ্রমণের সুযোগ দেবে না। আগামী পাঁচ বছরে আমাদের ভাড়া বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ ইউরোয় উঠবে। তবে তিনি এ-ও মনে করেন, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় সত্ত্বেও মানুষরা অবাধে উড়োজাহাজে উড়বেন।

তখন তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের সংস্থার সর্বনি¤œ ১ ইউরো (শূন্য দশমিক ৯৯ ইউরো) ও এমনকি ১০ ইউরোর (৯ দশমিক ৯৯ ইউরো) বিমান টিকিট কিনে উড়োজাহাজে উড্ডয়নের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। আমি মনে করি, আপনি পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে এই ভাড়াগুলো আর দেখতে পাবেন না। জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বিমানভাড়া বাড়বে। এছাড়া মানুষের পরিবার পর্যায়েও জ্বালানি ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ ব্যয় মেটাতে মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও ও’লিয়ারি জানান, তিনি আশা করেন, যাত্রীরা উড়োজাহাজে উড্ডয়ন কমানোর পরিবর্তে কম খরচের বিকল্পগুলো খুঁজবেন। অর্থাৎ ভাড়া বাড়লেও যেসব সংস্থার টিকিটের দাম কম হবে, তাদের উড়োজাহাজে চড়বেন যাত্রীরা। আমরা মনে করি, মানুষ ঘন ঘন উড়তে থাকবেন। তবে আমার ধারণা, মানুষ অনেক বেশি মূল্য সংবেদনশীল হয়ে উঠবেন।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে আসা ও ছেড়ে যাওয়া শীতকালীন সময়সূচি ঘোষণা করেছে রায়ান। প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা ব্রিটিশ এয়াজওয়েজ লক্ষ্য রেখে এ সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, মন্দা অনেক যাত্রীর জন্য দুশ্চিন্তার ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি ঝুঁকি তাদের জন্য। তবে তার আশা, আসছে শীতে ভালো ব্যবসা করবে রায়ান।

দ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস, চলতি বছরের শেষের দিকে মন্দায় পড়তে পারে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। একনাগাড়ে দুই থেকে তিন মাস অর্থনীতি সংকুচিত হলে এমন আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নেবে। মন্দার কারণে অথবা জ্বালানি সংকটে যুক্তরাজ্যের যাত্রীদের চাহিদা সামগ্রিকভাবে কমে আসবে। তবে গত চার থেকে পাঁচটি মন্দায় দেখা গেছে, যাত্রীরা বিলাসবহুল এয়ারলাইন্স যেমন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ইজিজেটের পরিবর্তে সাশ্রয়ী রায়ানএয়ারের মতো সংস্থা বেছে নেন।

তার মতে, ক্রেতারা একইভাবে সেইনবুুরিজ থেকে কেনাকাটা কমিয়ে লিডল ও আলডিতে যান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেই। জ্বালানি সংকটেও তার সংস্থা অন্যদের তুলনায় সাশ্রয়ী দামে সেবা দেবে। তবে এখন পর্যন্ত কভিডে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ কোটি যাত্রীর মধ্যে ২ লাখ যাত্রীকে তাদের অর্থ ফেরত দিতে পারেনি সংস্থাটি। এ প্রসঙ্গে মাইকেল বলেন, যাত্রীরা হয়ত অনলাইন ট্রাভেল এজেন্টদের কাছ থেকে বুকিং নিয়েছিলেন। অনেক যাত্রীর ই-মেইল অ্যাড্রেসের মতো অন্যান্য বিষয়ও ভুল হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রায়ানএয়ার কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া গ্রীষ্মের শুরুতে বিমানবন্দরগুলোয় কর্মীদের যে অভাব দেখা দিয়েছে তা হিথ্রো বাদে অন্য সব বিমানবন্দরে শিগগির কেটে যাবে বলে আশাবাদী মাইকেল। হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজ পরিচালনা করে না রায়ান। কর্মীদের মজুরি বাড়ানো হবে। বিশেষ করে কভিড-পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হবে কর্মীদের বেতন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন সিইও। মহামারিতে বেতন কাটার ফলে ইউনিয়নের সঙ্গে তিক্ততা হয় কর্তৃপক্ষের, তবে অন্য সংস্থার তুলনায় কম কর্মী সংকট ও ফ্লাইট বাতিলের সমস্যায় পড়ে রায়ান। মাইকেলের আশা, নতুন ৫১টি বোয়িং নিজেদের বহরে যুক্ত করার ফলে আগামী বছরগুলোয় তাদের যাত্রীসংখ্যা আরও বাড়বে।