Print Date & Time : 22 July 2025 Tuesday 4:20 pm

মন্দার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে এখনই

স্মরণকালের সবচেয়ে সংকটময় মন্দাবস্থা বিরাজ করছে ভারতের অর্থনীতিতে। খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে সংকট এতটাই প্রকট যে, দেশটির সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত বেশ কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে মন্দার কারণে দেশটির মুদ্রার মানও ধারবাহিকভাবে কমছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের অর্থনীতিও এ মন্দার বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ ভারত আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। কাজেই তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের অনেক বিষয়ই জড়িত। তাই এ ধরনের মন্দার নেতিবাচক প্রভাব যাতে আমাদের অর্থনীতিকে কোনোভাবেই স্পর্শ করতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকদের এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে।
দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। উন্নয়ন অগ্রগতিতে ব্যাংকের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু ব্যাংক খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা পর্যবেক্ষণ ইতিবাচক নয়। ব্যাংক খাত বর্তমানের উন্নয়ন হয়তো ম্লান করছে না, তবে ব্যাংক খাতের উল্লেখযোগ সাফল্য আছে, এটি বলা যাবে না। আর যে সমস্যার কারণে ভারত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে, সেই ঋণখেলাপি সমস্যা আমাদের দেশেও প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে অধিক সতর্কতা কাম্য।
খেলাপি ঋণ এখন আমাদের ব্যাংকগুলোর প্রধান সমস্যা। এ সমস্যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে অন্য সমস্যা। খেলাপি ঋণ কমানো গেলে অন্য সমস্যাগুলো থাকবে না। কোনোভাবে খেলাপি ঋণে নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না। এটি মোকাবিলায় ভারতের কৌশল নিতে পারে। পাহাড়সম খেলাপি ঋণ, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও ক্রমাগত লোকসানের কারণে ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক একীভূত করছে দেশটি। (শেয়ার বিজ, ৩১ আগস্ট)
২৭টি ব্যাংককে ধাপে ধাপে একীভূত করে ১২টি ব্যাংকে সংখ্যা নামিয়ে আনা হবে। এর মধ্যে ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে মিলে চারটি ব্যাংকে পরিণত হবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
দেশটির অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংকের আর্থিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভালো আর্থিক ভিত্তি ও পর্যাপ্ত পরিমাণ মূলধন নিয়ে ব্যাংকগুলো কাজ করবে। এই ঘোষণা এমন সময়ে এলো, যখন এপ্রিল-জুন (২০১৯) প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশে নেমে গেছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ।
ব্যাংক খাত বর্তমান সময়ে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। সাধারণ মানুষের আমানত নিয়ে কাজ করায় এটি স্পর্শকাতর খাতও বটে। এখানে একটু উদাসীনতা কিংবা অনৈতিকতায় সংঘটিত অনিয়ম গরিব মানুষ পথে বসবে, খাতটিও ধসে পড়বে; অবধারিতভাবে অর্থনীতিও। তাই সরকার শিগগির ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।