মন্দা জাহাজ ভাঙায় বাড়ছে করের বোঝা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : গত কয়েক বছরের মন্দায় পুরোনো জাহাজ ভাঙা ব্যবসা কমেছে। একাধিক জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। এমন সংকটেও সীতাকুণ্ড উপজেলার জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলো ইস্পাত খাতে প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের ৬০ শতাংশ জোগান দেয়। বর্তমানে পুরোনো আমদানিকৃত জাহাজে আমদানি শুল্ক হিসাবে প্রতি টনে সরকারকে ১ হাজার ৫০০ টাকা শুল্ক দেন ইয়ার্ড মালিকরা, যা আগামী করবর্ষে দিতে হবে ১ হাজার ৮০০ টাকা। একইভাবে স্থানীয় বিক্রিতে টনপ্রতি ভ্যাট এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া একই পণ্যে দ্বিতীয়বার কর-ভ্যাট নেয়া হচ্ছে।

জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড ও রি-সাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী পরিত্যক্ত ও পুরোনো জাহাজের শেষ ঠিকানার শীর্ষ গন্তব্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিপ ইয়ার্ডে। অর্থাৎ আমদানিকৃত পুরোনো জাহাজগুলো সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলবর্তী জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোয় ধাপে ধাপে কেটে বিক্রি করে। এর মধ্যে প্লেট, লোহার টুকরা, পুরোনো বিভিন্ন রকমের সরঞ্জাম ইত্যাদি লৌহ ও ইস্পাত কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে সরবরাহ করা হয়। ফলে লৌহ ও ইস্পাতশিল্পের ছোট ও বড় কারখানাগুলো এ কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। গত অর্থবছরে ১৫২টি পুরোনো জাহাজ আমদানি করা হয়েছে। এসব জাহাজ থেকে লোহার টুকরো পাওয়া গেছে ৯ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন।

এর আগের ২২-২৩ অর্থবছরে ১৪৭টি পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়েছে। সেগুলোয় লোহার পরিমাণ ৯ লাখ ৭১ হাজার টন। মূলত ডলার-সংকটের কারণে ঋণপত্র (এলসি) খোলায় যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, তার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্পে। এর পাশাপাশি বহুমাত্রিক শুল্ক বৈষম্যের শিকার জাহাজ ভাঙার ব্যবসায়ীরা। পুরোনো আমদানিকৃত জাহাজ আমদানি শুল্ক হিসাবে প্রতি টন সরকারকে ১ হাজার ৫০০ টাকা শুল্ক দেন ইয়ার্ড মালিকরা, যা আগামী করবর্ষে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে মোট এক হাজার ৮০০ টাকা করা হচ্ছে। আবার স্থানীয় বাজারের বিক্রির সময়ে টনপ্রতি এক হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয় কর হিসাবে, যা আগামী করবর্ষে টনপ্রতি পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ২০০ টাকা করে।

এ ছাড়া জাহাজ আমদানির সময়ে জাহাজে ব্যবহƒত পুরোনো জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, জাহাজের এলডিটির ভিত্তিতে শুল্ক, কর, ভ্যাট ইত্যাদি পরিশোধ করা হচ্ছে। আবার একই পণ্যের যখন স্থানীয় বাজারের বিক্রি করা হয়, তখন শুল্ক বিভাগ আবার পণ্যের ভিত্তিতে দ্বিতীয়বার শুল্ক, কর, ভ্যাট ইত্যাদি আদায় করছে। অর্থাৎ একই পণ্যের জন্য দুবার শুল্ক, কর ও ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জাহাজে থাকা লুব অয়েলের জন্য দুই হাজার ৫০০ ডলার করে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে।

অপরদিকে বিদেশ থেকে দেশের বড় স্টিল মিলগুলো আমদানিকৃত স্ক্র্যাপের মাধ্যমে কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করে। আর আমদানি পর্যায়ে প্রতি টনে সরকারকে এক হাজার ৫০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করছে, যা আগামী করবর্ষে হবে ১ হাজার ৮০০ টাকা। আর অগ্রিম কর ছিল ৫০০ টাকা, তা বেড়েছে হচ্ছে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া লোকাল সেলে ভ্যাট আরও ৫০০ টাকা বেড়ে হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা।

এ বিষয়ে আরেফিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, জাহাজ ভাঙা থেকে ইস্পাত কারখানায় স্ক্র্যাপ তথা প্রধান কাঁচামালে জোগান দিচ্ছি। আগামী বাজেটে প্রতি টনে আরও ৬০০ টাকা করে কর ও ভ্যাট বাড়ছে। তবে কষ্টের বিষয় হলো জাহাজে ব্যবহৃত লুব অয়েল ও পোড়া মবিল/সøাজ ইত্যাদিও নতুন তেলের ট্যারিফ মূল্যে টনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ ইউএস ডলার শুল্ক, কর, ভ্যাট ইত্যাদি বাবদ ৪৫ শতাংশ আদায় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ অবচয় সুবিধা প্রদান করে অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ লুব অয়েলের ট্যারিফ মূল্য এক হাজার ডলার (প্রতি মে.টন) নির্ধারণপূর্বক শুল্ক, কর, ভ্যাট ইত্যাদি আদায়ের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে, যার যৌক্তিকতা হিসেবে জাহাজ পরিচালনার প্রয়োজনে জ্বালানি হিসেবে তেল ও লুবঅয়েল নেয়া হয়। আর পোড়া তেল তো সমুদ্রে ফেলা যায় না, তাই এসব পোড়া তেল এনবিআর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জাহাজ থেকে নিতে পারে। আমরা বেশি শুল্ককর কীভাবে দেব? তিনি আরও বলেন, জাহাজ আমদানির সময়ে জাহাজে ব্যবহƒত পুরোনো জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, আসবাবপত্র জাহাজের এলডিটির ভিত্তিতে শুল্ক, কর, ভ্যাট ইত্যাদি পরিশোধ করা হচ্ছে। আবার একই পণ্য যখন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়, তখন শুল্ক বিভাগ আবার পণ্যের ভিত্তিতে দ্বিতীয়বার শুল্ক, কর, ভ্যাট ইত্যাদি আদায় করছে। অর্থাৎ একই পণ্যের জন্য দুবার শুল্ক, কর ও ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। অথচ এসব পুরোনো জিনিস বিক্রি করে পরিশোধিত কর-ভ্যাটের টাকাও পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড ও রি-সাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহিরুল ইসলাম আসন্ন বাজেটে কয়েকটি সুপারিশসহ একটি চিঠি দেন এনবিআর চেয়ারম্যানকে। সেই চিঠিতে বলা হয়, পুরোনো জাহাজ আমদানি পর্যায়ে প্রতি টনে ১ হাজার ৮০০ টাকার পরিবর্তে টনে এক হাজার ৫০০ টাকা করা, জাহাজের থাকা যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের ওপর দ্বিতীয়বার শুল্ক আদায় পরিহার করা, জাহাজে থাকা লুব অয়েলে প্রতি টনে ২ হাজার ৫০০ ডলারের পরিবর্তে এক হাজার ডলার কর নির্ধারণ করার দাবি জানান।