Print Date & Time : 28 August 2025 Thursday 3:10 am

মন্দা পুঁজিবাজারে চলছে স্বল্প দৈর্ঘ্যরে কারসাজি!

সাইমউল্লাহ সবুজ: পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানি বছর শেষে শেয়ারধারীদের জন্য নামমাত্র লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ ঘোষণা করছে না বা করতে পারছে না। তাই লভ্যাংশের হিসাব বাদ দিয়ে বিনিয়োগকারী মুনাফা খুঁঁজছেন সেকেন্ডারি বাজারে। আর এ সুযোগ নিয়ে মন্থর বাজারেও মুনাফা তুলতে সক্রিয় রয়েছে ছোট-বড় একাধিক কারসাজি চক্র, যারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলোভিত করতে আঁটছে নানা ফন্দি।

সম্প্রতি কিছু প্রতিষ্ঠানের লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর নিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যরে কারসাজি হচ্ছে। এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রবণতা এক সপ্তাহ স্থায়ী হচ্ছে না। আবার ফ্লোর প্রাইসে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারও আশার আলো দেখিয়ে উল্টো ঠকাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। কিছু ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বমুখী যাত্রাপথ দীর্ঘ হলেও স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা।

হঠাৎ শেয়ারদরের উত্থান হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম আজিজ পাইপস লিমিটেড। এ কোম্পানির শেয়ারদর ২০২৩ সালের ১১ জুলাই ছিল ৯৬ টাকা ৬ পয়সা, যা একই মাসের ১৮ তারিখ দাঁড়ায় ১৩৩ টাকা ৭ পয়সায়। এ হিসাবে মাত্র ৫ কার্যদিবসের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩৭ টাকার বেশি বা ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ। পরে ১৬ আগস্ট আজিজ পাইপসের শেয়ারদর আবার ৯৬ টাকায় নেমে আসে।

একই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে নভেম্বরে আবারও সক্রিয় হয় কারসাজির চক্র। এতে গত ১ নভেম্বর ৯২ টাকা ৪ পয়সায় থাকা শেয়ারদর ১৪ ডিসেম্বর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪২ টাকা ৯ পয়সায়। এ হিসেবে ৩১ কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বেড়েছে ৫০ টাকা ৫ পয়সা বা ৫৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। কোনো কারণ ছাড়াই এ ধরনের শেয়ারদর ওঠানামার কথা নয় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

চামড়াশিল্পের প্রতিষ্ঠান সমতা লেদার কমপ্লেক্সের শেয়ারদর গত ২৮ নভেম্বর ছিল ৫৮ টাকা, যা মাত্র সাত কার্যদিবসে বেড়েছে ১৫ টাকা ৫ পয়সা বা ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। এতে ৭ ডিসেম্বর শেয়ারটির দর ৭৩ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠে। এর পর থেকে শেয়ারটির দর পতনমুখী। সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর শেয়ারদর কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬ টাকা ৬ পয়সায়।

জিলবাংলা সুগার মিলসের শেয়ারদর গত নভেম্বর মাসের ৯ কার্যদিবসে বেড়েছে ৪৩ টাকা ৮০ পয়সা। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ছিল ১৩০ টাকা ২ পয়সা, যা ১৬ নভেম্বর পৌঁছায় ১৭৪ টাকায়। পরে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর ১৩২ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে আসে। গতকাল ১৮ ডিসেম্বর তা কমে দাঁড়ায় ১৪২ টাকা ১০ পয়সা।

ওষুধ ও রসায়ন খাতের সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ারদর গত ১ নভেম্বর ছিল ১১ টাকা ৬০ পয়সা, যা এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়ে ১২ ডিসেম্বর হয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর নিম্নমুখী। গতকাল তা ২২ টাকা ১০ পয়সায় নেমে গেছে।

বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারদর গত ২৯ অক্টোবর ছিল ৯ টাকা ৮০ পয়সা, যা ২৭ কার্যদিবসে ২৩ টাকা ৯০ পয়সা বাড়ে। ১০ ডিসেম্বর এ শেয়ারদর পৌঁছায় ৩৩ টাকা ৭ পয়সায়। এর পর থেকে শেয়ারটিরদর পতন অব্যাহত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, শেয়ারদর ওঠানামায় অনিয়মের বিষয়গুলো তদন্ত করা হয়। আমাদের কাছে শেয়ারদরে অনিয়মের সুনিদিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন বলেন, বাজার অনিয়মের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই শেয়ারদর ওঠানামা করছে। বিএসইসির উচিত কারা এমন কারসাজি করছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।