ক্লাস বর্জনের ঘোষণা

ময়লা-আবর্জনার স্তুপ অপসারণের দাবিতে শ্রীমঙ্গলে ফের আন্দোলন

প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার : ফের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় অপসারণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় কলেজ গেইটের সামনে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে শিক্ষার্থীরা ময়লার স্তুপ সরানোর বিভিন্ন দাবি উল্লেখিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অংশ নিতে দেখা যায়।

আজ মঙ্গলবার সকালে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সামনে কলেজে অধ্যয়নরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যাগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এই ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। কলেজের সকল ক্লাস, পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। তাঁদের দাবী মেনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত ক্লাসে অংশ নিবে না বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ‘গত ১১ মে বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গল চৌমুহনী চত্বরে সরকারি কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা অধ্যয়নরত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলো। সে সময় তারা সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলো যে, দাবি বাস্তবায়ন না হলে ফের অবস্থানে যাবে শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনে পৌরসভার বিশাল ময়লার ভাগাড়। প্রতিদিন পুরো শহরের ময়লা আবর্জনা এখানে এনে ফেলা হয়। ময়লার গন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা কষ্টকর। প্রচুর দুর্গন্ধ চারদিকে। আমরা ক্লাস করতে পারি না। নাক মুখ চেপে রেখে বসে থাকতে হয়। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আমাদের একটাই দাবি, দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে যে ময়লার ভাগাড়টি রয়েছে, সে ময়লার ভাগাড়টি সরানোর। আমরা গত বৃহস্পতিবার কলেজের সামনে থেকে ময়লার ভাগার অপসারণের দাবিতে সড়কে নেমেছিলাম। আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।’

গত বৃহস্পতিবারের অবরোধ কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। তখন তারা বলেছিলো, ‘প্রধানমন্ত্রী কাউকে নিরাশ করেন না, আমরা চাই আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবীটি যেনো উনার কাছে পৌঁছে যায়। আমাদের প্রশাসন, আমাদের সরকার সবসময় শিক্ষার্থীর পাশে ছিল। আজও আমাদের পাশে থাকবে।’

সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে নাফিসা বক্তব্যে বলেন, ‘এই ময়লার স্তুপে প্রচুর কুকুরদের আনাগোনা। কুকুরগুলো নানা সময় শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করেছে। কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়েছে বহু শিক্ষার্থী। আমরা এই সমস্যা নিয়ে নানান সময় পৌর মেয়রের কাছে গিয়েছি, আবেদনও করেছি কিন্তু সুফল বা সমাধান পাইনি। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবাদের দাবি থাকবে, আমাদের এই দাবি মেনে নিয়ে যেনো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ময়লার ভাগাড় সরানোর ব্যবস্থা করেন।’

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দীপ চাঁন কানু শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ময়লার ভাগাড়ের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আজ শুনেছি তারা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এভাবে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করলে তাদের অনেক ক্ষতি হবে। শিক্ষার্থীদের এই দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত এই ময়লার ভাগাড় অপসারণ করা হোক। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় ফিরে যাক।’

ময়লার ভাগাড় অপসারণ করার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা তো চাই, এই ময়লার ভাগাড় এখান থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে। তার জন্য জায়গাও কিনেছি, কিন্তু অন্য আরেকটি পক্ষ মামলা করার কারণে, তা আটকে রয়েছে। যার কারণে ময়লার ভাগাড় স্থানান্তর করতে পারছি না।’

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড়টি অপসারণের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছিল স্কুল, কলেজ, মাদরাসার হাজারো শিক্ষার্থী। সে সময় জেলা প্রশাসকের ৬ মাসে স্থানান্তরের আশ্বাস ও ময়লার ভাগাড়ের চারিপাশে টিনের দেয়াল দেয়ার প্রস্তাবে আন্দোলন স্থগিত করেছিলো শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের কেউ তাঁদের কথা রাখেননি।