ডেঙ্গু রোধের বাহক এডিস মশা নিধনে রাজধানীর দুই মেয়রের ব্যর্থতার দায় এড়ানোর কসরত নগরবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে বলেই ধারণা। কেউ তো এমনও বলেছেন, ‘মেয়রদের পরিবারের কারও যদি ডেঙ্গু হতো’! ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে ছেলেধরার মতো নিছকই গুজব বলেও উড়িয়ে দিয়েছেন তারা। টি-শার্ট পরিহিত মেয়র এডিস মশা থেকে রক্ষার জন্য নগরবাসীকে লম্বা জামা ও সার্বক্ষণিক মোজা পরার পরামর্শ দিয়েছেন। নগরবাসীকে সচেতন করতে কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগের কথাও বলেছেন। কিন্তু এডিসের বিস্তার রোধে কী ভূমিকা রেখেছে তা নগরবাসীই নয়, দেশবাসীও জানে। এডিস মশার প্রজনন রোহিঙ্গাদের মতোই এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যও শুনেছি আমরা। রাজধানীতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা মেয়ররা স্বীকার না করলেও ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা না করে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি নিজেই দুই দফায় ডেঙ্গুজ্বরে ভুক্তভোগী। মশার ভয়ে আগারগাঁওয়ে অফিস করেননি তিনি।
মশা নিধন নিয়ে উচ্চ আদালতকেও কথা বলতে হয়েছে বারবার। আদালত বলেছেন, সত্যিকারে যেখানে এডিস মশা থাকে, সেখানে ওষুধ ছিটালেই তো হয়। জনগণকে সচেতন হতে হবে, এটি ঠিক আছে। কিন্তু সব দায় জনগণের এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা জানতে দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন ডিএসসিসি’র মেয়র। সেখান থেকে ছবি পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অবগত করেছেন। কিন্তু এগুলোর সুফল কী, তা কারও জানা নেই।
মশার ওষুধ কেনা নিয়েও তেলেসমাতি দেখিয়েছে সিটি করপোরেশন। মশক নিধনের ওষুধ অকার্যকর জানার পরও তা পরিবর্তনের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি দুই সিটি।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) মশা নিধনের ওষুধ পরীক্ষা করে বলেছে, দুই সিটির সরবরাহকৃত ওষুধ ‘অকার্যকর’। একই ওষুধ পরীক্ষা করে সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখাও (সিডিসি) বলেছে, ‘ওষুধ অকার্যকর’। তা সত্ত্বেও স্বচ্ছতার সঙ্গে ওষুধ কেনার বিষয় গুরুত্ব পায়নি।
দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘মশার ওষুধ কেনায় পদে পদে দুর্নীতি হয়েছে’। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিচ্ছন্ন রাস্তাকে পরিষ্কার করে কর্মসূচি বাস্তবায়নের মতোও ঘটনা ঘটেছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে সাধারণ মানুষের বক্তব্যই উঠে এসেছে বলে আমরা মনে করি। সংস্থাটির বক্তব্যের প্রতিবাদ করার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। অহেতুক প্রতিবাদ করে মেয়রদ্বয় নিজেদের ব্যর্থতার পাল্লা ভারী না করে অনিয়ম-দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবেন বলেই প্রত্যাশা।
