রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সমীক্ষায়। গত মাসে দুই সিটির ৯৮ ওয়ার্ডে পরিচালিত ওই সমীক্ষায় ২৭টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বুধবার মশা নিয়ে করা জরিপের ফলাফল জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত ১১-২৩ আগস্ট রাজধানীর ১১০ এলাকার ৩ হাজার ১৫০টি বাড়ি পরিদর্শন করে জরিপকর্মীরা। এসব বাড়ির মধ্যে ৩৯২টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির ২১৫টি ও উত্তর সিটির ১৭৭টি বাড়ি। ২ হাজার ৭৫৮টি বাড়িতে এডিস মশার কোনো লার্ভা পাওয়া যায়নি। উত্তর সিটির ১৩টি ও দক্ষিণ সিটির ১৪টি ওয়ার্ড অর্থাৎ মোট ২৭টি ওয়ার্ডে এইডিস মশার উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি পাওয়া গেছে।
সাধারণত এপ্রিল-অক্টোবর কালকে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন-সেপ্টেম্বর এই চার মাস মূল মৌসুম। কয়েক দিনের থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলছে।
ডেঙ্গুর সব উপসর্গ-লক্ষণ সম্পর্কে কিছু ধারণা রাখলে প্রতিকারে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। যেকোনো জ্বরের রোগীরই ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হবে। জ্বর পাঁচ দিনের বেশি থাকলে ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে আনুষঙ্গিক অন্যান্য পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষার পাশাপাশি কভিড পরীক্ষাও করাতে হবে। কারণ, কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এখন সংক্রমণ একসঙ্গেই হতে দেখা যাওয়ার কথা বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কভিড ও ডেঙ্গুর উপসর্গ কাছাকাছি হওয়ায় জ্বর হলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
মশার বংশ বিস্তার রোধে মাঝেমধ্যে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে সিটি করপোরেশনগুলো। যদিও তা অপ্রতুল। কর্তৃপক্ষের দিকে চেয়ে না থেকে নাগরিক দায়িত্ব পালনেও যতœবান হতে হবে। মশা নিধনের চেষ্টার সঙ্গে মশার উৎপত্তিস্থল, বংশবিস্তার বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এখন কমবেশি সবাই জানেন মশার আবাস ও বংশবৃদ্ধি সম্পর্কে। সবাইকে নিজ বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং কোথাও যেন স্বচ্ছ পানি না জমে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত বাসার আশপাশে স্প্রে করতে হবে। মশার কামড় থেকে সুক্ষায় যথাসম্ভব সাদা বা হালকা রঙের ফুলহাতা পোশাক পরতে হবে। হাতে-পায়ে মশা নিরোধক মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়িতে নেট ও মশারি ব্যবহার করতে হবে।
নাগরিকরা সচেতন হলেও মশার বিস্তার কিছুটা কমবে, তাতে সন্দেহ নেই। মূল কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। কেননা মানুষ নিজের বাসা-বাড়ি, সংলগ্ন জায়গা পরিষ্কার রাখতে পারেন, রাজধানী নয়। প্রত্যেক এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা গেলে সুফল মিলবে। মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীতে নির্মাণ-উন্নয়ন কাজ বেড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বর্ষাকালে এডিস মশার বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়।