মস্তিষ্কের জটিল রোগ মাল্টিপল স্কে¬রোসিস

মাল্টিপল স্কে¬রোসিস একধরনের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের ভেতর স্নায়ুরজ্জুকে আক্রমণ করে। এতে ইমিউন সিস্টেম ভুলভাবে স্নায়ুতন্তুগুলোর প্রতিরক্ষামূলক আবরণকে আক্রমণ করে থাকে। মাল্টিপল স্কে¬রোসিস তাই একধরনের অটোইমিউন ডিজিজ।

এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা, পেশিতে অসহ্য ব্যথা, মাথাব্যথা-মাইগ্রেন, খাদ্যনালি-মূত্রনালিতে সংক্রমণ এবং একই সঙ্গে হাত-পা অসাড় হয়ে যায়। কোনো কিছু চিন্তা করার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা, অবসাদ, বিষণ্নতা ও একাকিত্বে ভোগে রোগী। নারীদের মাল্টিপল স্কে¬রোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষের থেকে কয়েকগুণ বেশি। ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এ স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। পরিবেশ, জিন ও বংশগত কারণে এটি হতে পারে।

উপসর্গ: মাল্টিপল স্কে¬রোসিসে পেশির ওপর চাপ পড়ে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেশির দুর্বলতা এ রোগের প্রধান লক্ষণ। পেশিতে ব্যথা হয়। হাত-পা নাড়ানো যায় না। পেশিতে টান ও খিঁচুনি হতে পারে। একসময় অসাড় হতে থাকে হাত-পা। স্পর্শের অনুভূতি থাকে না। হাঁটাচলা, খাবার খাওয়া এবং কথা বলায় সমস্যা হয় অনেকের; খাদ্যনালি, অন্ত্র ও মূত্রনালি আক্রান্ত হয়। অবসাদ, উৎকণ্ঠা ও হতাশা গ্রাস করে। বুদ্ধির বিকাশ বাধা পায়। অস্থিরতা দেখা দেয়, স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তায় সমস্যা হয় এবং কারও কারও শ্রবণশক্তি চলে যায়। মাঝেমধ্যেই শরীরে কাঁপুনি দেখা দেয়।

রোগনির্ণয়: রোগনির্ণয়ে এমআরআই স্ক্যান করা হয়। অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি টেস্টে চোখের স্নায়ুর ছবি তোলা হয়। স্পাইনাল ট্যাপ পরীক্ষায় ধরা যায়, স্পাইনাল ফ্লুইডের কতটা ক্ষতি হয়েছে। রোগ কতটা ছড়িয়েছে, সেটাও নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী থেরাপি দেওয়া হয়। ইভোক পটেনশিয়াল টেস্টে ব্রেন ড্যামেজ হয়েছে কি না, ধরা যায়।

চিকিৎসা: শুরুতে ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা ও মেডিটেশনে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিছু থেরাপিও আছে, যাতে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফিজিক্যাল থেরাপি ও আকুপাংচার থেরাপিও কার্যকর। নানারকম যোগ ও কাউন্সেলিং করানো হয় রোগীকে; অনেক রকম ওষুধও আছে, যেমন ডিজিজ-মডিফাইং ওষুধ, প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ। স্টেরয়েড দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপিউটিক এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগও আছে; এসব ছাড়াও শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং দিনে কিছুটা সময় মেডিটেশন করা উচিত।

লেখক: ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা