Print Date & Time : 9 September 2025 Tuesday 7:13 pm

মস্তিষ্কের ভেতর পানি জমে যে রোগে

মস্তিষ্কে বা ব্রেনে পানি জমা এবং এর কারণে মাথা বড় হওয়াকে ইংরেজিতে বলে হাইড্রোকেফালাস। আমাদের মস্তিষ্কের গভীরে ভেন্ট্রিকল নামে এক ধরনের শূন্যস্থান আছে, যেখান থেকে সিএসএফ বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড নামের তরল পদার্থ তৈরি হয়। একদিকে এই তরল মস্তিষ্কের ভেতর তৈরি হয়, অন্যদিকে তা রক্তে শোধিত ও নিষ্কাশিত হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ফলে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মগজে ১৫০ মিলি পরিমাণ সিএসএফ থাকে, যদিও প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ মিলিলিটার তৈরি হয়। অর্থাৎ বাকি অংশ রক্তে শোষিত হয়। কোনো কারণে এই তরলের চলার পথে যদি টিউমার হয়, বা রক্তক্ষরণ হয়, অথবা জš§গতভাবে পথটি বন্ধ থাকে, তাহলে তরল ঠিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারে না। তখনই এই তরল জমে ও হাইড্রোকেফালাস হয়।

প্রতিরোধ: জš§গত হাইড্রোকেফালাস অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা যায়। রক্তের সম্পর্কের মধ্যে বিয়েশাদি দেয়া বা না করা অন্যতম প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সাধারণত নিউরাল টিউব গর্ভাবস্থার চার সপ্তাহের মধ্যে তৈরি হয়, যা থেকে পরবর্তী সময়ে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড ও স্পাইন তৈরি হয়। মায়ের শরীরে ফলিক অ্যাসিডের অভাব হলে গর্ভস্থ শিশুর নিউরাল টিউব ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। ফলে পরে জš§গত হাইড্রোকেফালাসসহ মেরুদণ্ডের জন্মগত টিউমার হতে পারে। তাই গর্ভধারণের আগে থেকে পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত মায়ের ফলিক অ্যাসিড সেবন করা উচিত।

লক্ষণ: হাইড্রোকেফালাস হলে নবজাতক ও শিশুর মাথা ক্রমে অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। শিশুটির মেজাজ খিটখিটে, আইকিউ কম বা মেন্টাল রিটার্ডেশন থাকে। কোনো সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ও খিঁচুনি হয়। তা ছাড়া মাথাব্যথা, বমি-বমি ভাব বা বমি হওয়া ও চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হয়ে থাকে। এসব লক্ষণ ছাড়াও রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে আসে এবং হাঁটতে গেলে ভারসাম্য নষ্ট হয়।

চিকিৎসা: মাথার সিটি স্ক্যান করে রোগ নিশ্চিত করা সম্ভব। এ রোগের চিকিৎসার নাম হলো ভেন্ট্রিকুলো পেরিটোনিয়াল সান্ট এন্ডোস্কোপিক থার্ড ভেন্ট্রিকুলোস্টম। জšে§র পর শিশুর মস্তিষ্কে পানি জমা বা হাইড্রোকেফালাস সন্দেহ হলে দ্রুত একজন নিউরো সার্জনের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ডা. হারাধন দেবনাথ

অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা