শেয়ার বিজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারির চরম বিপর্যয়ের মধ্যেও বিশ্বজুড়ে বেড়েছে সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যয়। আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে এ খাতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার। গতকাল সোমবার স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। খবর: বিবিসি, এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সারা বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় দুই দশমিক ছয় শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৮১ বিলিয়ন ডলারে। অথচ এ সময়ে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমেছে চার দশমিক চার শতাংশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া সত্ত্বেও সামরিক খরচ বৃদ্ধির অর্থ হলো প্রতিরক্ষা খাতে খরচ জোগাতে ঘাটতি বাজেটের বোঝা টানতে হয়েছে অনেক দেশকে।
গবেষণা প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ডিয়েগো লোপস ডা সিলভা বলেন, ‘এটি অপ্রত্যাশিত। কারণ মহামারি পরিস্থিতিতে সামরিক খরচ কমবে বলেই সাধারণভাবে ধারণা করেছিলাম আমরা। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে যে দেশে দেশে প্রতিরক্ষা ব্যয়ে কভিডের কোনো প্রভাব অন্তত ২০২০ সালে একেবারেই পড়েনি। সামরিক খাতে এমন বিপুল ব্যয়ের ধাক্কা অনেক দেশকে দীর্ঘদিন বহন করতে হবে বলেও সতর্ক করেন এ গবেষক।
২০০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর এত বেশি হারে সামরিক বাজেট বৃদ্ধির ঘটনা এটাই প্রথম। জিডিপির দুই শতাংশ সামরিক খাতে খরচের লক্ষ্য এ বছর পূরণ করেছে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর ১২টি সদস্য দেশ। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯টি।
কার ব্যয় কত: এদিকে সামরিক খরচে শীর্ষে গত বছরও ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। যদিও দেশ দুটির মধ্যে খরচের পার্থক্য বেশ বড়। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে মোট প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ৩৯ শতাংশই করেছে ওয়াশিংটন। বেইজিংয়ের খরচ ১৩ শতাংশ।
সাত বছর প্রতিরক্ষা বাজেট নি¤œমুখী থাকার পর বিগত তিন বছর ধরে এ খাতে খরচ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে টানা ২৬ বছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী সামরিক বাজেট চীনের, যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারে।
সিপ্রি বলছে, কিছু দেশে মহামারির কারণে এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও চিলি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে সামরিক বাজেটে কাটছাঁট করে উদ্বৃত্ত অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ব্রাজিল ও রাশিয়ার মতো কিছু দেশ আবার মহামারির কারণে সামরিক বাজেট কমানোর ঘোষণা দেয়নি। কিন্তু ২০২০ সালে সামরিক খাতে খরচের জন্য দেশগুলোর যা বরাদ্দ ছিল, শেষ পর্যন্ত সে পরিমাণ অর্থ তারা খরচ করেনি।’ আবার হাঙ্গেরি ও অন্য কিছু দেশ মহামারি নিয়ন্ত্রণে প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ হিসেবে সামরিক খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ২০০৮-০৯ সালে অনেক দেশ অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে মিতব্যয়ী বাজেট ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এবার তেমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।