এসএম রুবেল, কক্সবাজার: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ২৭ কিলোমিটারের প্রধান সড়কে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্পিড ব্রেকার স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সড়কে যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টিসহ দুর্ঘটনা বেড়েছে।
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর সড়কে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে দেড় হাজারের বেশি মানুষ। এ সময়ে সড়কে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল প্রায় ২০।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গোরকঘাটা বাজার থেকে হোয়ানক ইউনিয়ন হয়ে বদরখালী যেতে ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এ সড়কে কিছুদুর পরপর স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। মহেশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ফায়ারসার্ভিস অফিস, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, মহেশখালী বালক উচ্চ বিদ্যালয়সহ সব স্কুলের সামনে একটি বা দুটো করে স্পিড ব্রেকার দেয়া হয়েছে। এমনকি ১০ ফুটের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে দুটো করে স্পিড ব্রেকার।
জানা গেছে, ২৭ কিলোমিটারের এ সড়কটি ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে ৫৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। একই বছরের ১০ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়কটি উদ্বোধন করেন। সড়কটি নির্মাণের ফলে মহেশখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটলেও যাত্রী সুরক্ষা হুমকিতে পড়ে।
এ সড়কটি নির্মাণের সময় দুপাশে পথচারীদের হাঁটার জায়গা রাখা হয়নি। সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ মোড়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়নি কোনো সংকেত সাইনবোর্ড। গতি নিয়ন্ত্রণের সাইনবোর্ডও নেই।
গোরকঘাটা বাজার, নতুনবাজার, টাইমবাজার ও কালারমারছড়া বাজারে দিনের বেশিরভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং, সড়কঘেঁষে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ এবং গাড়ি থেকে মালামাল উঠানামার কাজ করায় তীব্র যানজট হয়।
জানা গেছে, এ সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান, দুর্ঘটনাকবলিত স্থান ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোয় স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে এসব স্পিড ব্রেকার স্থাপন করেন। এখন এ স্পিড ব্রেকারগুলোই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। তাই এ স্পিড ব্রেকারগুলো উচ্ছেদ করে দুর্ঘটনার ঝুঁকিরোধে সংকেত বসানোসহ এ সড়কের অনিয়মগুলো নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
মহেশখালী নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক সাকিব নেওয়াজ বলেন, ‘সড়কে সংকেত স্থাপন করা দরকার ছিল। স্কুল, কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সড়ক সংকেত থাকলে দুর্ঘটনারোধে সহায়ক হতো। কিন্তু প্রধান সড়ক নির্মাণের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সড়কে সংকেত লাগানো হয়নি। অপরদিকে দুর্ঘটনারোধে প্রশাসনের কোনো ভূমিকাও নেই।’
প্রধান সড়কে এসব অবৈধ স্পিড ব্রেকার বন্ধের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ইয়াসিন বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এফএম শামীম বলেন, ‘সড়কে অবৈধ স্পিড ব্রেকার নির্মাণের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’