শেয়ার বিজসহ একাধিক সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গরুর মাংসের দাম ঈদের আগে ৭০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে মাংসের বাজারের এ অস্থিতিশীলতা ক্রেতা-বিক্রেতা কারও জন্যই ভালো নয়। মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেছেন, ইতোমধ্যে দেশে অর্ধেকের বেশি মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা মনে করি, এ হারে দাম বাড়তে থাকলে মানুষ গরু ও খাসির মাংস কেনা আরও কমিয়ে দেবে। এতে খাতটির ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা কাজ হারাবে এবং তাদের পরিবারও পড়বে সংকটে। প্রভাব পড়বে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ও। মাংস ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর গাবতলীর গরুর হাটে চাঁদাবাজির যে অভিযোগ তুলছেন, সেটি আমলে নিয়ে বড়সড় ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছেÑতেমন খবরও অন্তত গণমাধ্যমে দেখা যায়নি।
ভারত থেকে যে গরু আসতো, তার ওপর দেশের মাংসের বাজার ছিল অনেকটা নির্ভরশীল। ভারত সরকার সে বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় সেখান থেকে গরু আসার পথ অনেকটাই রুদ্ধ এখন। আমাদের প্রশাসন অবশ্য বলেছিল, দেশে গরুর উৎপাদন মন্দ নয়। কিছুদিনের মধ্যে আমরা নিজেরাই দেশি গবাদিপশুর মাংস দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে পারবো। এমনকি কোরবানির ঈদে নির্ভর করতে হবে না ভারতের ওপর। অথচ বর্তমান পরিস্থিতি তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছে না। হাটে চাঁদাবাজি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে যে অসহযোগিতার অভিযোগ গত ১৫ মাস ধরে ব্যবসায়ীরা আনছেন, শুধু সে কারণে মাংসের দাম কেন এতটা বাড়ছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আর শুধু এসব কারণে যদি অব্যাহতভাবে মাংসের দাম বাড়তে থাকে, তবে সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে নাÑসেটিও বোধগম্য নয়। অবশ্য ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে আমরা অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ থেকে দেশের বড় জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। গরু বা খাসির মাংসের ওপর ততটা নির্ভরশীলও নয় সাধারণ ক্রেতারা। গরুর মাংসের অন্য রকম জনপ্রিয়তা দেশে রয়েছে, সেটিও অস্বীকার করা যাবে না। আর সে কারণে এর দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
২০১৫ সালের রমজানে যেখানে গরুর মাংসের দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৮০ টাকা, মাত্র দুবছরে সেটি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। আর খাসির মাংস ৭০০ টাকার ওপরে উঠে গিয়ে সাধারণের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে বেশ আগে। দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীরা যে যুক্তিগুলো দেখাচ্ছেন সেগুলো সত্য কি না, তা অবিলম্বে যাচাই করে দেখা দরকার। এর সত্যতা মিললে দ্রুত তা সমাধানের উদ্যোগও নিতে হবে সরকারকে। আর দেশি গরু ও খাসির উৎপাদনে সংকট আছে কি না কিংবা সে বিষয়ে ভুল পরিসংখ্যান উপস্থাপিত হচ্ছে কি নাÑসেটিও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। আমরা চাই না জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাংসের বাজার নষ্ট হোক।