Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 12:43 am

মাইক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ নেই: সৈয়দপুরে মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ জনজীবন

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর: নীলফামারীর সৈয়দপুরে বেড়েই চলেছে উচ্চ আওয়াজে মাইক ব্যবহারের প্রবণতা। যাচ্ছেতাইভাবে মাইক ব্যবহারের ফলে শব্দদূষণে অতিষ্ঠ শহরবাসী। পাশাপাশি উচ্চ আওয়াজের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। অথচ দেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা থাকলেও বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সৈয়দপুর শহরে দিন-রাতে শোক সংবাদ, সুখবর-ডাক্তার রোগী দেখছে, পণ্য বিক্রি, বিভিন্ন ধর্মীয় ওয়াজ-অনুষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, মসজিদ-মন্দির নির্মাণ ও ধর্মীয় কাজে দান সংগ্রহ, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সভা-সমাবেশে উচ্চশব্দে মাইক ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি বহুসংখ্যক মাইক টাঙিয়ে প্রচার চালানো হয় অনুষ্ঠানস্থল ছাড়াও বাইরে জনাকীর্ণ বাজার বা আবাসিক এলাকায়। উচ্চ হর্নের এসব মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। অথচ শব্দদূষণের যন্ত্রণা লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো উদ্যোগ।

এদিকে সৈয়দপুর শহরে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী প্রতিনিয়ত শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে। এতে বিঘিœত হচ্ছে তাদের পড়াশোনা। আবার অনুষ্ঠান আয়োজনে নিয়ম মানার কোনো বালাই নেই। গভীর রাত পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানের মাইকের উচ্চ আওয়াজে মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া শিশু, রোগী ও প্রবীণরা শব্দযন্ত্রণায় নাজেহাল হচ্ছেন।

শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও এক স্কুলছাত্রীর বাবা নূর মোহাম্মাদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, প্রতিদিনই উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহারের ফলে তার সন্তানসহ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। তাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শোক সংবাদ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে চলছে বেশি নৈরাজ্য। গভীর রাত পর্যন্ত চলা এসব প্রচার ও অনুষ্ঠান জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে দিনের বেলা শব্দের মাত্রা ৫৫ ডেসিবল এবং রাত ৯টার পর ৪৫ ডেসিবল অতিক্রম করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। কেউ তা অতিক্রম করলে জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় বিষয়টি সম্পর্কে মানুষ অবগত নয়। নীলফামারী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শব্দদূষণের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি কমে যায়। হৃদরোগীদের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয় উচ্চমাত্রার শব্দ। অনেক সময় মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত হানে, যা থেকে ব্রেন হ্যামারেজের শিকার হতে পারেন যে কেউ।

সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেয়াজুল আলম রাজু বলেন, দিন দিন শব্দের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারা এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিতে হবে। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা রুহুল আলম মাস্টার বলেন, শব্দদূষণ বন্ধে উদ্যোগ নিতে পারে পৌরসভা। বিশেষ করে মাইক ব্যবহারের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া মাইক ভাড়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করলে ফল পাওয়া যাবে।

সৈয়দপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান শব্দদূষণের কথা স্বীকার করে বলেন, নিয়ম মেনে মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধা নেই। তবে উচ্চমাত্রার শব্দে মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শব্দদূষণ রোধে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই তা দেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. মূসা জঙ্গী বলেন, উচ্চ আওয়াজে মাইক ব্যবহার করে শব্দদূষণ করা মারাত্মক সমস্যা। এ নিয়ে জেলা পর্যায়ে সভায় কথা হয়েছে। পৌরসভা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।

সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার শব্দদূষণের মাত্রা বৃদ্ধির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মাইক ব্যবহারে অনুমতির বিধান থাকলেও কেউ অনুমতি নেন না। শহরে মাইক ব্যবহারে নৈরাজ্য চলছে। এজন্য সামাজিক আন্দোলন ও প্রশাসনের পদক্ষেপ প্রয়োজন।