মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়কে ভাগাড়

মেহেদি হাসান শুভ, মাদারীপুর: মাদারীপুর শহর ও পৌরসভা এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান (ডাম্পিং পয়েন্ট) নেই। পৌর কর্তৃপক্ষ এ ময়লা-আবর্জনা ফেলছে শহরের প্রবেশপথ মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের খাগদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। এতে এলাকার পরিবেশ ও বাতাস দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে এলাকাবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ও বাড়ির পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ড্রাম, ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন ও স্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা আছে। প্রতিদিন এসব স্থান থেকে গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ট্রাক, পিকআপ ও ভ্যানে করে মাদারীপুর-শরীয়তপুর মহাসড়কের খাগদী এলাকায় ফেলা হয়। রাত হলে ওই ময়লার স্তূপে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন মহাসড়ক ও আশেপাশের এলাকায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের খাগদী এলাকা থেকে অন্তত ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে ফেলা হচ্ছে পৌরসভার বর্জ্য। যেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে তার পাশেই একটি মাদরাসা। তার পেছনে রয়েছে কয়েকটি বাড়ি। উল্টো পাশে রয়েছে যুব-উন্নয়ন অধিদফতর। অর্থাৎ চারপাশে লোকালয়। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চলাচল করেন। এ পথে চলাচলকারী কিংবা যানবাহনের যাত্রীদের এ ময়লা ফেলার অংশটুকু নাকে রুমাল চেপে চলতে হচ্ছে।
পৌরসভার এক পরিচ্ছন্ন কর্মী জানান, এখানে প্রায় দুই বছর ধরে ময়লা ফেলা হচ্ছে। আগে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সামনে ফেলা হতো। এখন ওখানে একটি তেলের পাম্প হয়েছে। তাই এখন একটু এগিয়ে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এখানে ময়লা ফেলতে এলে অনেক লোক বকাবকি করেন। কিন্তু এছাড়া ময়লা ফেলার কোনো জায়গা নেই।
মস্তফাপুর এলাকা থেকে রোজ এ পথ ধরে কলেজে যান নিপা কাজী। তিনি জানান, খাগদীর পরে পুরো দুই মিনিট দম বন্ধ করে থাকতে হয়। প্রতিদিন দুইবার এ দুর্গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে। এখানে ময়লা ফেলায় পরিবশে দূর্ষণ হচ্ছে। সবার নাক-মুখ বন্ধ করে যেতে হচ্ছে। এই জায়গাটা রোজ পাড়ি দিতে খুব খারাপ লাগে। এ শহরের এত উন্নয়ন হয় কিন্তু ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নেই।
খাগদী এলাকার নাজমা বেগম জানান, আমাদের ময়লার দুর্গন্ধ সহ্য করা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় বাচ্চাদের। ওরা এই দুর্গন্ধের কারণে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ময়লার স্তূপে রাতে আবার আগুন দেওয়া হয়। এর ফলে পুরো এলাকায় ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়। শিশুরা এর কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভোগে। ময়লা না ফেলতে অনেক বার পৌর মেয়র, জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ময়লা ফেলা বন্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এ পথে চলাচলকারী যাত্রী রাসেল ফকির জানান, শহরে ঢোকার পথেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। প্রতিটি মানুষকে নাক চেপে ধরে কয়েক মিনিট পথ চলতে হয়। তখন দম বন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়। কর্তৃপক্ষ এভাবে মহাসড়কের পাশে ময়লা না ফেললে মানুষ বেঁচে যেত।
মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন জানান, শহরের ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা ভাগাড় নেই। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলতে হচ্ছে। তবে আর ওখানে ময়লা ফেলা হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। খুব শিগগিরি ওই ময়লা লোকালয় থেকে দূরে ও নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হবে।