Print Date & Time : 2 August 2025 Saturday 10:18 pm

মানবতা ও ভ্রাতৃত্বে কুমিল্লা জেলা সমিতি

গোমতীর কুমিল্লা থেকে পদ্মাপারের রাজশাহীর দূরত্ব নেহাত কম নয়। সড়কপথে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। মাঝে আঞ্চলিক সংস্কৃতির দৃশ্যনীয় ফারাক। তারপরও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন চোখে নিয়ে বরেন্দ্রভূমির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন, আসতে হয় কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের। বাড়ি ছেড়ে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো কম ঝাক্কির নয়। তাদের এ ঝক্কির অনেকটাই যেন মোলায়েম করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কুমিল্লা জেলা সমিতি।

‘বুকে নিয়ে ময়নামতি, শালবন আর গোমতী, আলোর বার্তা পৌঁছাব আমরা বিশ্বব্যাপী’ সেøাগানকে সামনে রেখে ২০১১ সালের ৮ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লা জেলা সমিতি যাত্রা করে। যাত্রার পর থেকে ফিবছর কেবল ভর্তি-ইচ্ছুকদের সহায়তা, বার্ষিক বনভোজন ও নবীনবরণ করেই ক্ষান্ত থাকেনি সংগঠনটি, দেশ ও মানবতার ডাকেও সাড়া দিয়ে প্রতিবারে এগিয়ে এসেছেন এর সদস্যরা। বছরজুড়ে সংগঠনটির নানা সাংগঠনিক কর্মব্যস্ততা এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে বেশ সাড়া ফেলেছে।

২০১৭ সালে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় গোটা উত্তর বঙ্গ প্লাবিত করে। দিনাজপুরের মতো উঁচু জেলাও প্লাবিত হয়। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের অনেক মানুষ। বন্যার এ ভয়াবহতা গোটা দেশের মানুষের হƒদয় আন্দোলিত করে। সরকারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে আসে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে। বসে থাকেননি রাবির কুমিল্লা জেলা সমিতির সদস্যরা। বাক্সহাতে সাহায্যের আশায় দূরদূরান্তে বেড়িয়ে পড়েন এর সদস্যরা। প্রায় চার লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করেন তারা। পরে নওগাঁ, দিনাজপুর, রংপুর ও কুড়িগ্রামের দুর্গম অঞ্চলের বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা দেয় সংগঠনটি।

মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে এ বছরের জানুয়ারির শীতেও উত্তরবঙ্গের শীতার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিল জেলা সমিতির সদস্যরা। ৩ থেকে ৫ জানুয়ারি রংপুর ও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থানসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের শীতার্তদের প্রায় দেড় টাকার ত্রাণ সহায়তা করেন তারা।

শুধু তা-ই নয়, পড়াশোনার একঘেয়েমি দূর করতে প্রায়ই বনভোজন, প্রীতি ম্যাচ, ভ্রমণ, প্রতিটি জাতীয় দিবস উদ্যাপন ও রমজানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে সংগঠনটি। ভর্তি পরীক্ষার সময় কুমিল্লা থেকে আসা ভর্তি-ইচ্ছুকদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে। নবীনদের বরণ ও তাদের আবাসনের ব্যবস্থাও করেন সংগঠনটির সদস্যরা।

সাবেক-বর্তমানদের মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা হয় নানাভাবে। গুণী ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। কোনো সদস্য শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে বা বিপদে পড়লে তৎক্ষণাৎ ছুটে যান অন্য সদস্যরা, ঠিক পরিবারের মতোই। এ সবকিছুর উদ্দেশ্য একটাইÑপরিবার ছেড়ে ক্যাম্পাসে আসার কষ্টটা যেন ক্ষাণিকটা কমেÑএমনটাই জানালেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান।

জেলা সমিতির বর্তমান সভাপতি জামসেদ সবুজ বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে দেশ ও মানুষের প্রতি আমাদের বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে। জেলা সমিতির মাধ্যমে সে কাজটিই করতে চাই। জেলা সমিতিকে কেবল আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে এর কাজকে মানবসেবার বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যেতে চাই। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

  মুজাহিদ হোসেন