মানবসেবায় অবদান রাখতে চেয়ারম্যান-মেম্বার হতে হয় না: এলজিইডিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে এবং দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে সবাইকে মেম্বার-চেয়ারম্যান হতে হয় না। তিনি বলেন, মেম্বার-চেয়ারম্যান না হলে কারও জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। জনপ্রতিনিধি না হয়েও মানসিকতা এবং দেশপ্রেম থাকলে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা যায়।

গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার (সিজেএফডি) দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে শ্রেণিভেদ আছে, পেশার ভিন্নতা, ধর্মীয় ও বর্ণের পার্থক্য আছে। ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু আমরা মানুষ। যার যা প্রাপ্য সম্মান তাকে দিতে হবে। সব পেশার প্রতি সম্মানবোধ রাখা উচিত। দেশের উন্নয়নে কাউকে হেয় করার সুযোগ নেই। কাউকে বাদ দিয়ে উন্নত দেশ গড়া সম্ভব নয়।

তাই সব ভেদাভেদ ভুলে দেশের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

তিনি জানান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী এবং যুগোপযোগী করতে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ এবং পৌরসভার খসড়া সংশোধনী মন্ত্রিপরিষদে পাস হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ প্রদান নিয়ে সমালোচনা হলেও এই নিয়োগের ফলে নিয়োগকৃত পৌরসভায় রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে মাত্র ৩৮টি পৌরসভা তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এখন অধিকাংশ পৌরসভা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে।

ঢাকার চারপাশে নদী দখলমুক্ত, দূষণরোধ এবং নাব্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা শহরে অনেক নদী ও খাল বেদখল হয়ে গেছে। সেগুলো উদ্ধারে দুই সিটি করপোরেশন এবং বিআইডব্লিউটিএ অভিযান চালাচ্ছে। অনেক উদ্ধারও করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, কল্যাণপুরে ওয়াটার রিটেনশন পন্ডের জন্য রাখা ১৭৩ একর জায়গার মধ্যে মাত্র সাড়ে তিন একর জায়গা ছাড়া বাকি সব দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

ড্যাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২১ সালের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আহ্বায়ক করেন। গত এক বছর কভিডের সংকটেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সেমিনার ও মতবিনিময় করেছি। নানা সমস্যা সমাধান করে সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা কমিটি এটি চূড়ান্ত করে। এখন গ্যাজেটের অপেক্ষায় রয়েছে।

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে বৃহত্তর কুমিল্লার ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। কুমিল্লার উন্নয়নে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। কুমিল্লা শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন শহরে পরিণত করতে সবাইকে ভূমিকা রাখতেও বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের হƒদয়কে জয় করেছিলেন বলেই তার ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রেখে লাখো বাঙালি এদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করায় তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও যোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

সিজেএফডির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, সিজেএফডির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান খোকন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম।