সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গঠিত এন্টি মানি লন্ডারিং শাখা প্রথমবারের মতো বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মিথ্যা ঘোষণায় বিদেশি সিগারেট আনার অভিযোগে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দর থানায় গত ২৯ আগস্ট ফৌজদারি মামলা করা হয়।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মতিঝিল এলাকার মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড নিউ যন্ত্রপাতি ঘোষণায় সিঙ্গাপুর থেকে একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আনে। কিন্তু ২০১৮ সালের ৬ মে কায়িক পরীক্ষায় এতে ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার শলাকা সিগারেট পায় চট্টগ্রাম কাস্টমস। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিল এক কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ চালানের মাধ্যমে আমদানিকারক এক কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। আর শর্তসাপেক্ষে সিগারেট আমদানি হলেও এর বিপরীতে শুল্ক দিতে হতো আট কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ওই আমদানির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্মকর্তা উভয় অপরাধ করেছেন। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে জানা গেছে, মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান। আর চালান ও ব্যাংক হিসাবে উল্লিখিত ঠিকানাও ভুয়া।
প্রতিষ্ঠানটি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা থেকে ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল আমদানি ঋণপত্র খোলে। যার মূল্য দেখানো হয়েছিল পাঁচ হাজার ১১০ ডলার। কিন্তু সব তথ্য ভুল, মুদ্রা পাচার, চোরাচালান ও শুল্ক-সংক্রান্ত অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে কাস্টমস। তারা হলেন এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল বারিক ও আমদানির সঙ্গে যুক্ত শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকার মো. কবির হোসেন।
অন্যদিকে ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার গ্রাম বাংলা ফুড করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গার্মেন্ট পণ্য ফেল্ট ঘোষণায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৬৫ লাখ শলাকা বিদেশি সিগারেট আনে। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যাংক এশিয়ার উত্তরা শাখায় ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিনে এলসি খোলে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুর থেকে গার্মেন্ট পণ্য ফেল্ট আমদানির ঘোষণা দিয়েছিল। এলসিতে পণ্যের মূল্য দেখানো হয় আট হাজার ৮২০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাত লাখ ৪৫ হাজার ২৯০ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যা ঘোষণায় ৭৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার সিগারেট নিয়ে আসে। চালানটির মাধ্যমে ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ৭১০ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে তদন্তে উঠে আসে। পাশাপাশি শুল্ক ফাঁকি হয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকা। চালানটি আমদানির সঙ্গে যুক্ত গ্রাম বাংলা ফুড করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী দেওয়ান বুলবুল ইসলাম, নূর আল মামুন রুবেল, আওলাদ জান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে জানা যায়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দুটির অনুকূলে প্রায় ১২ কোটি টাকার পৃথক দুই এলসি খোলা হয় একই তারিখে। যার সরবরাহকারীও সিঙ্গাপুরের একই প্রতিষ্ঠান। ফলে উভয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং এলসির মার্জিন হিসেবে অর্থ জমা প্রদানকারীর মধ্যে পারস্পরিক যোগসাজশ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই প্রাথমিক তথ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে, প্রতিষ্ঠান দুটি মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে মুদ্রা পাচার করেছে। আর দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে মামলা করা হয়েছে।
তৎকালীন অডিট ইনভেস্টিগেশন ও রিসার্চ (এআইআর) শাখার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি কমিশনার ও বর্তমান এন্টি মানি লন্ডারিং শাখার সদস্য নুর উদ্দিন মিলন শেয়ার বিজকে বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনা দুই প্রতিষ্ঠান মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাই প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে জড়িত পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আনায় মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ ও গ্রাম বাংলা ফুড করপোরেশনকে কারণ দর্শিয়ে পরবর্তী শুনানিতে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিলে আমদানিকারক বা তাদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত হননি। তাই পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এরপর বাজেয়াপ্ত সিগারেটগুলো বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।