শেয়ার বিজ ডেস্ক: কোনো মানুষেরই অজানা নয় যে, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নিয়ে সবসময় আশাবাদী ছিলেন। তিনি এবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি সবার জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। খবর: সিএনএন।
সম্প্রতি এআইয়ের বহুল ব্যবহার সবার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ কর্মী এর কারণে চাকরি হারাবেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এআইয়ের উত্থানের কারণে বিশ্বজুড়ে চাকরির বাজারে প্রায় ৪০ শতাংশ চাকরির ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
বিল গেটস এ ধারণার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ না করলেও তিনি বিশ্বাস করেন, এখন পর্যন্ত ইতিহাসে সব নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে ভয়ের বিষয়টি যেমন ছিল, তেমনি সেগুলো নতুন সুযোগও নিয়ে আসে। কিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তির ফলে ১৯ শতকে কৃষিতে বিপ্লব এলেও অনেকে নতুন প্রযুক্তির আগমনের ফলে তাদের কাজ হারানো নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। অথচ অনেক নতুন প্রযুক্তির ফলে নতুন ধরনের অনেক চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছিল এবং মাঠে শারীরিক পরিশ্রম করে কৃষিকাজের চেয়ে আমরা তখন বেশ আরামে ছিলাম। এআইয়ের ক্ষেত্রেও এমনই হবে।
সিএনএনের সাংবাদিক ফারিদ জাকারিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গেটস ভবিষ্যদ্বাণী করেন, এআই মানুষের জীবনযাপন সহজ করবে। চিকিৎসকদের কাগজপত্র সংক্রান্ত কাজ আরও সহজ হবে বলে তার ধারণা।
গেটস বলেছেন, মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সহজে এআই অ্যাকসেস নিতে তেমন কোনো নতুন হার্ডওয়্যারের দরকার হবে না। ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি-ফোর-এর উন্নয়ন নাটকীয় ছিল। কারণ এটি অভিজ্ঞ কর্মীর মতোই পড়তে ও লিখতে পারে, শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারে, বিশেষজ্ঞের মতো স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ দিতে পারে, কোডিং করতে সাহায্য করতে পারে ও প্রযুক্তিগত সহায়তা করতে হটলাইনের কলিং ব্যবস্থায়ও এর ব্যবহার করা যায়। শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে এই প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি হবে চমৎকার একটি বিষয়।
ওপেনএআইয়ের সঙ্গে মাইক্রোসফটের মাল্টিবিলিয়ন ডলারের অংশীদারিত্ব রয়েছে। মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বেশি শেয়ার থাকা শেয়ারহোল্ডারদের একজন বিল গেটস।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম উপলক্ষে জাকারিয়াকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে গেটস আরও বলেন, গেটস ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য হচ্ছে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোতে সুবিধা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে আনা। পশ্চিমের তুলনায় আফ্রিকায় চিকিৎসক ও শিক্ষকের বেশি সংকট চলছে।
তবে চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এআইয়ের ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে আইএমএফ তুলনামূলক কম আশাবাদী ছিল। তারা জানিয়েছে, রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপ ছাড়া এআই মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও গভীর করতে পারে।
বর্তমানে বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ ১৪০ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার কোটি ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ারস ইনডেক্স অনুযায়ী, তিনি বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। তবে তিনি সম্ভবত এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হতেন যদি তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করে না দিতেন। এক্ষেত্রে নিজের সম্পদের হারানোর ভয় করে না তিনি।
নিজের জনহিতকর কাজ সম্পর্কে গেটস বলেন, আমার নিজের খরচের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের চেয়ে বেশি অর্থ আমার রয়েছে। আমি নিজেকে ধনীর তালিকার নিচে নামিয়ে আনছি। যখন আমি সম্পূর্ণভাবে তলানিতে চলে যাব তখন আমি গর্বিত হব।
মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং তার সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস উভয়েই নিজেদের সম্পদের সিংহভাগ ২০ বছর আগে একসঙ্গে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনে দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাশাপাশি অন্যান্য জনহিতকর কাজের সঙ্গেও তারা যুক্ত হয়েছেন।
২০২২ সালে গেটস ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০২৬ সালের মধ্যে বার্ষিক ৯ বিলিয়ন বা ৯০০ কোটি ডলার করে অর্থছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ কাজে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে গেটস আশা প্রকাশ করেন, সংস্থাগুলো ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারবে।