শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত একটি নতুন বিলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সই করেছেন। এ বিলে যুক্তরাষ্ট্রের তদারকিতে অডিট না করালে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেশটির পুঁজিবাজারের তালিকায় রাখা হবে না। সরাসরি না বললেও চীনের কোম্পানিগুলোই ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এ আইনের টার্গেট বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, চীন বাইরের কোনো দেশের তদারকিতে অডিট করায় না। খবর : রয়টার্স।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মার্কিন কংগ্রেসে বিলটি পাস হয়। সংসদের দুই কক্ষে পাস হওয়া বিলটির নাম দ্য হোল্ডিং ফরেন কোম্পানিস অ্যাকাউন্টেবেল অ্যাক্ট। পরে অনুমোদনের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যায় বিলটি। গত শুক্রবার তিনি সই করলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। গত চার বছর ধরে চীনকে চাপে রাখার নীতি নিয়ে চলা ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার শেষ সময়ে এসে বিলটিতে সই করলেন।
আইনে বলা হয়েছে, বিদেশি কোম্পানিগুলো যদি মার্কিন স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত হতে চায়, তা হলে ইউএস সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) বেঁধে দেয়া নিয়ম মানতে হবে। বিল অনুযায়ী, এসইসির তদরকিতে কোম্পানির অডিট না হলে মার্কিন স্টক এক্সচেঞ্জে নাম নথিভুক্ত করা যাবে না।
যদিও এখানে সব বিদেশি কোম্পানির কথা বলা হয়েছে, তবে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা বিতর্কের সময় যা বলেছেন, তা থেকে পরিষ্কার, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো চীনের কোম্পানিগুলো। তাদের চাপে রাখতেই এ আইন পাস করানো হয়েছে। চীনের কোম্পানিগুলোকে জানাতে হবে, সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কোনো কর্মকর্তা বোর্ড সদস্য হিসেবে আছেন কি না।
বেশিরভাগ বিদেশি কোম্পানিই এসইসির তদারকিতে অডিট করায়। কিন্তু চীনা আইন অনুসারে কোনো চীনা কোম্পানি বিদেশে এ ধরনের অডিট করাতে পারে না। ফলে কোম্পানি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের স্টক রেগুলেটারদের হাতে থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে এসইসি ও চীনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে টানাপড়েন চলছে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অডিট করা নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় নথি জমা দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে চীনের আলিবাবা, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান পিনদৌদৌ ইনকোরপোরেশন এবং তেল কোম্পানি পেট্রোচায়নার মতো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত। নতুন এ আইনে চীনের কোম্পানিগুলোর কাছে মার্কিন পুঁজিবাজারের দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে থমকে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ এবার আবার নতুন মাত্রা নিতে পারে আশঙ্কা অনেকের। বাণিজ্যযুদ্ধ ছাড়াও করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক চলছিল। আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। নতুন এ আইনের প্রভাব নিয়ে চীনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ আইনে সই করার আগেই জো বাইডেনের সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বেইজিংয়ের বহু মার্কিন সমালোচক দু’দেশের মধ্যে বিরোধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন এবং উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থকে অবজ্ঞা করছেন। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনৈতিক শক্তি পারস্পারিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় ফিরবে বলেও আশা প্রকাশ করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।