নিজেদের মালিকানাধীন শাহ্ আমানত সুপার মার্কেটের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ লক্ষ্যে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। বলা হচ্ছে, আধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি সর্বসাধারণের জন্য একে গড়ে তোলা হবে একটি অত্যাধুনিক মার্কেট হিসেবে। স্থানীয়দের জন্য এটা সুসংবাদ। এতে ঘরের কাছেই তারা করতে পারবেন পছন্দের কেনাকাটা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, মার্কেটটি পুরোদমে চালু হলে চসিকের আয় বর্ধনেও তা রাখবে ভূমিকা। বর্তমানে মার্কেটটি থেকে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ কী পরিমাণ আয় হয়Ñওখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সে-সংক্রান্ত তথ্যও প্রকাশ করেছেন মেয়র। পরিমাণটিকে সঙ্গত কারণেই উৎসাহব্যঞ্জক বলা যাবে না। এ অবস্থায় এমন প্রশ্নও উঠবে, মার্কেটটি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত কি সুবিবেচনাপ্রসূত? বর্তমানে দেশে সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অবস্থা, তাতে ওখানে বিনিয়োগকৃত অর্থ কি ফেরত আসবে কাক্সিক্ষত সময়ে? আমরা মনে করি, মার্কেটের আধুনিকায়ন ও এ লক্ষ্যে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখাটাই মঙ্গলজনক হবে।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দেশের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসা পরিস্থিতির ব্যাপারে কিছু নেতিবাচক সংবাদ লক্ষ করা যাচ্ছে ইদানীং। এমন মার্কেট বা শপিং সেন্টার অনেক রয়েছে, বিশেষ কোনো উৎসব ছাড়া যেগুলোয় ক্রেতা সমাগম তেমন লক্ষ করা যায় না। এতে মার্কেটে থাকা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তো বটেই, ক্ষতিগ্রস্ত হন তার মূল উদ্যোক্তা। ব্যবসায় মন্দা পরিস্থিতির কারণে মার্কেটের উদ্যোক্তারাও অনেক ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছেন ঋণখেলাপিতে। উৎসব ঘিরে বড় ব্যবসায়ীদের একাংশ যখন দিচ্ছেন আকর্ষণীয় ছাড়, তখনই এমন মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী নিচ্ছেন গলাকাটা দাম। সন্দেহ নেই, পুরো বছরের পরিচালন ব্যয় ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই এ কৌশল অবলম্বন করেন তারা। চসিকের মালিকানাধীন মার্কেটটিও যে পরিবর্তিত অবস্থায় এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে না, সে নিশ্চয়তা কে দিতে পারে!
বন্দরনগরীতে ইতোমধ্যে যেসব আধুনিক মার্কেট গড়ে উঠেছেÑমানুষের চাহিদা পূরণে কর্তৃপক্ষ কি সেগুলোকে যথেষ্ট মনে করছে না? চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ এখন এতই সহজ যে, শপিংয়ের জন্য ওখানকার ক্রেতাদের একটি অংশ চলে আসতে পারে এ নগরীতে। উৎসব ঘিরে এ প্রবণতা ব্যাপকতা লাভ করে বলেই মনে হয়। তাহলে নতুন একটি মার্কেট নির্মাণ বা আধুনিকায়ন করে সেটিকে লাভজনক ধারায় পরিচালনা করা সম্ভব হবে কীভাবে? বস্তুত দেশের অন্যান্য নগরীতেও মার্কেট আধুনিকায়নে যারা বিনিয়োগে আগ্রহী, তাদের বিবেচনায় রাখতে হবে এ বাস্তবতা। আমরা নতুন ব্যবসার উদ্যোগ ও বিদ্যমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করি না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সমস্যা-সম্ভাবনা ও লাভ-লোকসানের হিসাব কষতে হবে যথাযথভাবে। এ ধরনের অনেক উদ্যোগ বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ তৈরি করেছে দেশের ব্যাংক খাতে। সুবিবেচনাহীন নতুন কোনো বিনিয়োগের কারণে তা আরও বেড়ে উঠুক কেউ সেটা চাইবেন না।