শেয়ার বিজ ডেস্ক: আফ্রিকার তিন দেশ ইথিওপিয়া, মালি ও গিনির শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর: রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বছর ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিশ্বের যেসব দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাবে সে দেশগুলো থেকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করা হবে। একই সঙ্গে কোনো দেশে সেনা অভ্যুত্থান হলে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে বলে হুশিয়ার করেছিলেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর স্থানীয় সময় গত শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্টের (এজিওএ) অধীন বাণিজ্য সুবিধার শর্ত লঙ্ঘনের কারণে ইথিওপিয়া, মালি ও গিনির নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে ওয়াশিংটনে ওই তিন দেশের দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ইথিওপিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একে চরম হতাশাজনক বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পদক্ষেপের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাধাগ্রস্ত হবে দেশটি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশটির নারী ও শিশুরা।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত বছর নভেম্বরে বলেছিলেন, ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলের তিগ্রাই অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এ কারণে দেশটির শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাতিল হতে পারে। ওদিকে সম্প্রতি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে মালি ও গিনিতে। এ কারণে এ দু’দেশের বেলায়ও একই পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। গত বছর ২৪ মে মালিতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। একই বছর ৫ সেপ্টেম্বর গিনির ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাতিলের কারণে সবচেয়ে বড় আঘাত লাগবে ইথিওপিয়ার বস্ত্র শিল্পে। এ খাত থেকে খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক অনেক ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করেন বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি হালকা প্রকৌশল শিল্পের আঞ্চলিক কেন্দ্র হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছিল ইথিওপিয়া, তাও হুমকিতে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।
ইথিওপিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলছে। বিশেষ করে তিগ্রাই অঞ্চলে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর বিবৃতিতে বলেছে, ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে সংঘাতের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
এর ওপর কভিড-১৯ মহামারি ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে নতুন করে অর্থনৈতিক চাপে পড়ল ইথিওপিয়া।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গিনি ও মালিতে অসাংবিধানিকভাবে সরকার পরিবর্তনের ঘটনায় বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
২০২১ সালে মালিতে নতুন করে সামরিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন আসিমি গোইটা। অভ্যুত্থানের আগে, তিনি দেশটির উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এর আগের বছর ২০২০ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার কেইটার বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন গোইটা। তখন প্রেসিডেন্ট হন ২০২১ সালের অপসারিত বাহ এন-দাও। গত বছর অভুত্থানের পর গোইটার নির্দেশে এন-দাও ও প্রধানমন্ত্রী মোক্তার ওউয়ানে গ্রেপ্তার হন।
আর গিনিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট আলফা কন্ডেকে পদচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। তখন সেনাবাহিনী, সংবিধান বাতিল করে সরকার ভেঙে দেয়া হয়েছে।
এজিওএ’র আওতায় সাব সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর রপ্তানি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানিতে বাণিজ্য বাধা দূর করার পাশাপাশি দেশগুলোকে রাজনৈতিক পরিবেশ ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।
২০০০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় এই শুল্কমুক্ত বাণিজ্য আইন পাস হয়। পরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় সরকারের সময় এর সম্প্রসারণ ঘটে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের মতে, এটি হলো আফ্রিকার
সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভিত্তি। ২০২০ সালে ৩৮টি দেশ এজিওএ’র আওতায় ছিল।