কদরের রাত সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে এত অধিকসংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন যে, সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করতে থাকে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবেকদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকেন, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবেকদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)। তিনি আরও বলেছেন, মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবেকদর সন্ধান করো। (বুখারি) হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে কদরের রাতে ইবাদতে মগ্ন হয়, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এ রাতে যত রাকাত ইচ্ছা, যে সুরা দিয়ে ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়।
শবেকদরে নামাজের বিশেষ কোনো নিয়তের কথাও হাদিসে বর্ণিত নেই। তাই নফল বা তাহাজ্জুদের নিয়তে নামাজ পড়লেই হবে।
নফল নামাজ যেহেতু ঘরে পড়া উত্তম, তাই এ রাতেও ঘরে থেকে নামাজ পড়লে উত্তম হবে। শবেকদরে বিশেষভাবে দোয়া কবুল হয়ে থাকে, তাই এ রাতে বেশি বেশি দোয়া করা চাই।
হে আল্লাহ! তুমি তো অত্যন্ত ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাস; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।
রমজানের শেষ দশকের এ রাতের মর্যাদা ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে কেউ এ রাতে একটি আমল করবে তা হাজার মাসের আমল হিসেবে পরিগণিত হবে।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে অতিবাহিত করতেন। যাতে কোনোভাবে শবেকদর থেকে বঞ্চিত হতে না হয়।
হজরত আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়ব?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
নবীজীকে তার স্ত্রী আয়শা শবেকদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে রাসুলুল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কী করব? তখন নবী মত দেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিজি) লাইলাতুল কদর গোটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত পুণ্যময় রজনী এবং এ রাত বিশ্ববাসীর জন্য স্রষ্টার অশেষ রহমত, বরকত ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। এ রাতে কোরআন শরিফ নাজিল হয়, যার অনুপম শিক্ষাই ইসলামের অনুসারীদের সার্বিক কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, ইহকালীন শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির পথ দেখায়।
কদরের মহিমান্বিত রাতটি হচ্ছে অন্তরের আয়না ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ঝকঝকে তোলার এক স্বর্ণালি সুযোগ। যারা কদরের রাত জেগে থেকে ইবাদাত করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের নাম পুণ্যবানদের তালিকাভুক্ত করেন এবং জাহান্নামের আগুনকে তাদের জন্য হারাম করে দেন। আর নৈকট্য লাভ করার মধ্যে রয়েছে একজন মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ সার্থকতা।
সে জন্য কদরের রাতে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। সেই সঙ্গে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। যেসব দোয়া পড়বেন চেষ্টা করবেন সেগুলোর অর্থ বুঝে নেওয়ার, তাহলে দোয়ার প্রতি মনোযোগ যেমন আকৃষ্ট হবে, তেমনি দোয়ার ব্যাপারে আরও বেশি আন্তরিকতা সৃষ্টি হবে।
এ রাতে বেশি বেশি নফল আদায় করার কথা বলা হয়েছে। তাহাজ্জুদের নামাজ ছাড়া অন্যান্য নফল নামাজ যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যেতে পারে। এছাড়া এতিকাফের মাধ্যমেও শবেকদরের ইবাদত করা যায়।
