মাহে রমজান

রোজা কী কী কারণে ভঙ্গ হয় এবং কী কী কারণে মাকরুহ হয়। রোজা ভঙ্গের কারণগুলো:

ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে।

স্ত্রী সহবাস করলে।

কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙবে না)।

ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করলে।

নস্য গ্রহণ করলে এবং নাকে বা কানে ওষুধ বা তেল প্রবেশ করালে।

জবরদস্তি করে কেউ রোজা ভাঙালে।

ইনজেকশন বা স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে ওষুধ পৌঁছালে।

কঙ্কর পাথর বা ফলের বিচি গিলে ফেললে।

সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সূর্যাস্ত হয়নি।

পুরা রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে।

দাঁত থেকে ছোলা পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য গিলে ফেললে।

ধূমপান করা, ইচ্ছাকৃত লোবান বা আগরবাতি জ্বালিয়ে ধোঁয়া গ্রহণ করলে।

মুখভর্তি বমি গিলে ফেললে।

রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।

মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর নিদ্রা থেকে জাগরিত হওয়া। এ অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।

রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রী সহবাস অথবা পানাহার করলে কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।

রোজার মাকরুহগুলো

অনাবশ্যক কোনো জিনিস চিবানো বা চাখা।

কোনো দ্রব্য মুখে দিয়ে রাখা।

গড় গড় করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া, কিন্তু পানি যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।

ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে থুথু জমা করে গলাধঃকরণ করা।

গীবত, গালাগালি ও ঝগড়া-ফাসাদ করা। কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া-ফাসাদ করতে এলে বলবে, আমি রোজাদার তোমাকে প্রত্যুত্তর দিতে অক্ষম।

সারা দিন নাপাক অবস্থায় থাকা। এটি অত্যন্ত গুনাহের কাজ।

অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা।

কয়লা চিবিয়ে অথবা পাউডার, পেস্ট ও মাজন প্রভৃতি দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা।

যেসব কারণে রোজা না রাখলে ক্ষতি নেই, তবে কাজা আদায় করতে হবে

কোনো অসুখের কারণে রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেললে, অথবা অসুখ বৃদ্ধির ভয় হলে। তবে পরে তা কাজা করতে হবে।

গর্ভবতী স্ত্রীলোকের সন্তান বা নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কা হলে রোজা ভঙ্গ করা বৈধ, তবে কাজা করে দিতে হবে।

যেসব নারী নিজের বা অপরের সন্তানকে দুধ পান করান, সেক্ষেত্রে রোজা রাখার ফলে যদি দুধ না আসে, তবে রোজা না রাখার অনুমতি আছে, কিন্তু পরে কাজা আদায় করতে হবে।

শরিয়তসম্মত মুসাফির অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে রাখাই উত্তম।

কোনো রোগী এমন পর্যায়ে চলে গেল যে কোনো দ্বীনদার মুসলিম চিকিৎসকের মতে রোজা ভঙ্গ না করলে তখন মৃত্যুর আশঙ্কা আছে, সেক্ষেত্রে রোজা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। পরে তা কাজা করতে হবে।

মাসিকের (বিশেষ সময়ে) নারীদের জন্য রোজা রাখা জায়েজ নয়। পরে কাজা করতে হবে।

যেসব বিষয় রোজা ভঙ্গের কারণ নয়

অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর ধুলাবালি, ধোঁয়া অথবা মশামাছি প্রবেশ করা।

অনিচ্ছাকৃতভাবে কানে পানি প্রবেশ করা।

অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি আসা, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প পরিমাণ বমি করা (মুখভরে নয়)।

বমি আসার পর নিজে নিজেই ফিরে যাওয়া।

চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা।

ইনজেকশন নেয়া।

ভুলক্রমে পানাহার করা।

সুগন্ধি ব্যবহার করা, বা অন্য কিছুর ঘ্রাণ নেয়া।

নিজ মুখের থুথু, কফ প্রভৃতি গলাধঃকরণ করা।

শরীর ও মাথায় তেল ব্যবহার করা।

ঠাণ্ডার জন্য গোসল করা।

মিসওয়াক করা। যদি মিসওয়াক করার দরুন দাঁত থেকে রক্ত বের হয়, তবে শর্ত হলো গলার ভেতর না পৌঁছানো।

ঘুমের মাঝে স্বপ্নদোষ হলে।

স্ত্রীলোকের দিকে তাকানোর কারণে কোনো কসরত ছাড়া বীর্যপাত হলে।

স্ত্রীকে চুম্বন করলে, যদি বীর্যপাত না হয় (রোজা না ভাঙলেও এটা রোজার উদ্দেশ্যের পরিপন্থি)।

দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা গোশত খেয়ে ফেললে (যদি পরিমাণে কম হয়), পরিমাণ বেশি হলে রোজা ভেঙে যাবে।

নুরুল আমিন