মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা সামরিক জান্তার ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দিতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা একই সঙ্গে অনেকগুলো কাজ করে চলেছে, যেগুলো গণতন্ত্র, ন্যায্যতা ও নৈতিকতার পরিপন্থি। তারা নিজ দেশে যেমন অশান্তি সৃষ্টি করেছে, তেমনই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিকল্পিত ছক অনুযায়ী মিয়ানমার জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ন করতে শুদ্ধি অভিযানের মতো নৃশংস অভিযান চালিয়ে মানুষ মারছে আবার কর্তৃত্ববাদী শাসকরা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বলছে, উন্নয়নই হচ্ছে রাখাইন সমস্যার একমাত্র সমাধান।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনারা রাখাইনে ‘নিরাপত্তাজনিত উচ্ছেদ অভিযান’ শুরু করার পর রোহিঙ্গাদের যে অবস্থা হয়েছে, সেটিকে মানবতা ও মানবিকতার দুর্গতি বলা যায়।
মানুষ মেরে উন্নয়ন, এটি সভ্য দুনিয়ায় কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। বাংলার মধ্যযুগের এক কবি বড়– চণ্ডীদাস উচ্চারণ করেছিলেন, মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী। সেই বাণী যুগে যুগে প্রতিভাত হয়েছে বিশ্বের নির্যাতিত, নিষ্পেষিত জনতাকে রক্ষায় পাশে থাকার মানবতাবাদী নেতাদের কণ্ঠে।
দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য হয়তো মিয়ানমারের ‘মিত্র’ দেশগুলো দেশটির অন্যায়-অবিচারের বিপক্ষে উচ্চকিত হচ্ছে না কিংবা হতে পারছে না; আর কত মূল্য দেবে মিয়ানমারের নিরীহ মানুষ! সভ্য মানুষ নীরব থাকে কী করে? আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দেবে জাতিসংঘ।
বিশ্বের গণতন্ত্র ও মানবতাকামী বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রোহিঙ্গাদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে ৪৪ বছর আগে ১৯৭৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার সরকার যে অভিযান শুরু করেছিল, সেটিই ভিন্ন নামে চলে আসছে। চলতি মাসে একটি বিমান হামলায় ১১ স্কুলশিশুর মৃত্যু এবং জুলাইয়ে জান্তা কর্তৃক চার বিশিষ্ট বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পক্ষে থাকা ভেটো ক্ষমতার অধিকারী মিত্র রাশিয়া ও চীনকে বোঝাতে এগিয়ে আসতে হবে। কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করতে হবে।
মিয়ানমারের ইতিহাসের নিষ্ঠাবান পাঠক জানেন, দেশটির সামরিক বাহিনী অত্যন্ত বেপরোয়া। বিশ্বের দেশে দেশে সামরিক শাসন এসেছে। তাদের কেউ কেউ সাধারণ মানুষের মন জয়ও করেছেন। কিন্তু নিয়ামমারের সামারিক শাসকরা বরাবরই নিজ দেশের জনগণের প্রতি নির্মম! নানা ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, দেশটির সামরিক জান্তা মানবতা ও গণতন্ত্রের মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে বৈশ্বিক সংস্থা জাতিসংঘের কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।