পলাশ শরিফ: সিম বিক্রির জন্য নতুন ‘০১৩’ সিরিজ চালুর অনুমতি পায়নি গ্রামীণফোন। পাঁচ মাস আগে সিরিজটি গ্রামীণফোনের নামে বরাদ্দ দেওয়ার পর আকস্মিকভাবে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)। এতে নতুন সিম কার্ড বিক্রিতে জটিলতায় পড়তে যাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন। কারণ ১৯৯৭ সালে বরাদ্দ পাওয়া ‘০১৭’ সিরিজের ১০ কোটি সিমের মজুদ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণফোনের অনুকূলে ‘০১৭’ সিরিজের ১০ কোটি সিম বরাদ্দ দিয়েছিল বিটিআরসি। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ সিম বর্তমানে সক্রিয়। গত বছর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধন না হওয়ায় প্রায় তিন কোটি নম্বর বন্ধ হয়েছে। এছাড়া অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণফোনের আরও কিছু নম্বর বন্ধ করে দিয়েছে বিটিআরসি। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্যও কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিম সংরক্ষিত রয়েছে। এসব কারণে গ্রামীণফোনের জন্য বরাদ্দ ‘০১৭’ সিরিজের ১০ কোটি নম্বরের মজুদ শেষ পর্যায়ে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট জটিলতা এড়াতে প্রায় দুবছর আগেই বিষয়টি বিটিআরসিকে জানিয়েছে কোম্পানিটি। ‘বিকল্প ব্যবস্থা সময়সাপেক্ষ’ হওয়ায় নতুন ‘০১৩’ সিরিজ বরাদ্দ চেয়ে গত বছরের শুরুতে বিটিআরসির কাছে আবেদন করে গ্রামীণফোন। ওই বছরের ২১ আগস্ট কমিশন সভায় গ্রামীণফোনকে শর্তসাপেক্ষে নতুন সিরিজ বরাদ্দ দেয় বিটিআরসি। এর আগে মেসার্স বিটিএল নামের একটি বেসরকারি কোম্পানিকে ওই সিরিজ বরাদ্দ দিয়েছিল বিটিআরসি। গ্রামীণফোনের আবেদনের পর আগের বরাদ্দ বাতিল করে ‘০১৩’ সিরিজটি গ্রামীণফোনকে দেওয়া হয়। কিন্তু নিরীক্ষা ইস্যুতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে গ্রামীণফোনের চলমান অচলাবস্থার কারণে পাঁচ মাসেও চালু হয়নি গ্রামীণফোনের নতুন সিরিজ। আর শেষ মুহূর্তে এসে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত বদলে বিপাকে পড়ে গ্রামীণফোন। তবে নতুন সিরিজ বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা নতুন নয়। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সঙ্গে গ্রামীণফোনের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে। সর্বশেষ নতুন ‘০১৩’ সিরিজ বরাদ্দ পেলেও গ্রামীণফোন ‘নিরীক্ষা’ সংক্রান্ত শর্তের কারণে তা চালু করতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামীণফোনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বরাদ্দ করা নম্বর শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেই নতুন সিরিজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে বিটিআরসির শর্তের কারণে চলমান নিরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে নতুন সিরিজ চালু হয়নি। এখন বিটিআরসির ওপরেই সব কিছু নির্ভর করছে। শিগগির জটিলতার অবসান না হলে গ্রামীণফোন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে বিটিআরসির এক সভায় গ্রামীণফোনকে নতুন ‘০১৩’ সিরিজের বদলে বায়োমেট্রিক পুনঃনিবন্ধন না করা পৌনে এক কোটি সিম বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংস্থাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে ‘চিঠি ইস্যুর আগে কোনো মন্তব্য’ করতে চাননি বিটিআরসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
জানা যায়, আগামী মাসেই পুরোনো সিমের মজুদ শেষ হয়ে যাবে গ্রামীণফোনের। এর মধ্যে অনুমতি পেলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনঃনিবন্ধন না হওয়া পৌনে এক কোটি সিম আবার বিক্রির সুযোগ পাবে কোম্পানিটি। অন্যদিকে নোটিস প্রদান সাপেক্ষে টানা ১৫ মাস ধরে বন্ধ প্রায় তিন কোটি নম্বর আবার বিক্রির সুযোগও রয়েছে। তবে পুরোনো সিম বিক্রির জন্য গ্রামীণফোনকে কমপক্ষে ১৫ মাস অপেক্ষা করতে হবে।
নতুন সিরিজ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের জনসংযোগ শাখার উপপরিচালক সৈয়দ তালাত কামাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নতুন সিরিজ বরাদ্দ দেওয়া না-দেওয়া বিষয়ে বিটিআরসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি এখনও আমরা হাতে পাইনি। চিঠি পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
১৯৯৭ সালে ‘০১৭’ সিরিজের ৯ ডিজিট নিয়ে বাংলাদেশে সেলফোন সেবা শুরু করে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান টেলিনরের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এরপর দুই দফায় একটি করে ‘১’ ডিজিট যোগ হয়ে সর্বশেষ নম্বরটি ১১ ডিজিটে দাঁড়ায়। কোটা বাড়ানোর সুযোগ না থাকা ও নতুন সিরিজ বরাদ্দ নিয়ে জটিলতায় বন্ধ সিমই গ্রামীণফোনের অন্যতম ভরসা। বিটিআরসির চূড়ান্ত নির্দেশনা পেলে সংকট কাটাতে বাধ্য হয়ে ‘সময়সাপেক্ষ’ পথই বেছে নিতে হবে কোম্পানিটিকে। সেক্ষেত্রে আগামী বছরে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে পুঁজিবাজারের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানিটি।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের প্রায় ১৩৫ কোটি তিন লাখ শেয়ার পুঁজিবাজারে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে এক হাজার ৯৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিটি। এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ১৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তালিকাভুক্তির পর থেকে মুনাফায় ঊর্ধ্বগতির কারণে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে গতকাল গ্রামীণফোনের প্রতিটি শেয়ার ২৯৭ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।