Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 8:24 pm

মীরসরাইয়ে ভারী বর্ষণ ও ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

প্রতিনিধি, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) : টানা ছয় দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মীরসরাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে সহস্রাধিক পরিবার। কাজ না থাকায় কষ্টে রয়েছে দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ।

পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে খাল সংস্কার না থাকায় ও অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এছাড়া পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত। পানিবন্দি ৪৫০ পরিবারের মধ্যে গতকাল বুধবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, টানা ছয় দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নি¤œাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, মীরসরাই সদর, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের বিভিন্ন স্থানে। সড়কে গর্তের কারণে অনেকটা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক। পানিবন্দি হয়ে আছে ফেনাপুনি, গোভানিয়া, ওসমানপুরের মরগাং, চিনকীআস্তানা ও খিলমুরালী গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। চুলায় পানি ওঠায় রান্নাও বন্ধ।

মীরসরাই পৌরসভার গোভানিয়া ও খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাফুনি এলাকার পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ৭ শতাধিক  পরিবারে প্রায় ৫ হাজার মানুষ। কোমর পরিমাণ পানি হওয়ায় মানুষের চলাচলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান জানান, ফেনাফুনী খালটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টি হলে তো ভোগান্তির শেষ থাকে না। কোমর পরিমাণ পানির কারণে চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেকে রান্নাঘরের চুলায় পানি উঠায় রান্নাবান্না হয়নি। 

গোভানিয়া এলাকার বাসিন্দা ঝর্ণা রানী শীল জানান, খাল সংস্কার না করার কারণে আমরা মূলত পানিবন্দি হয়ে আছি। আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা চাই খাল সংস্কার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাল পার্শ্ববর্তী হাটবাজারগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা। এগুলোর কারণে বিভিন্ন খালে পানি প্রবাহে বিঘœ ঘটে। ফলে প্রতি বছর নি¤œাঞ্চল এলাকা পানির নিচে ডুবে যায়। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের পথ না রেখে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে তোলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

মীরসরাই পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন বলেন, গোভানিয়া খাল একদিকে আশীর্বাদ আর বর্ষায় অভিশাপ পরিণত হয়। পৌরসভায় থেকে এসব কাজ করা সম্ভব হয় না। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআরডিসি সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কাজ করবে বলে আর করেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘গত ৬ দিন টানা বৃষ্টিতে মীরসরাইয়ের অনেক এলাকায় পানি উঠে গেছে। বুধবার সকালে উপজেলার ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার ও ৬নং ইছাখালী ইউনিয়নের ২০০ পানিবন্দি পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের চিঠি দেয়া হয়েছে।’