পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করেছে সরকার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় এবং অত্যাধুনিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করেছে সরকার, এটাই সব থেকে বড় সাফল্য।’ গতকাল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় দেশের বৃহত্তম ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র’ উদ্বোধন এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। খবর: বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু বাংলাদেশ সবসময় পিছিয়ে যাচ্ছিল। (৯৬ সালের আগে) ২১টা বছর এবং এরপরে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশকে এগিয়ে নেয়ার কোনো আন্তরিকতাই তাদের ছিল না; এটাই হচ্ছে দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০২২ সাল এই দীর্ঘ সময় সরকারে থাকতে পেরেছি, সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। ভোট দিয়ে আমাদের তারা নির্বাচিত করেছেন। এই ১৩ বছর একটানা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অব্যাহত রয়েছে, এর মধ্যে ঝড়ঝঞ্ঝা অনেক এসেছে, বাধা অনেক এসেছে, কিন্তু সেগুলো আমরা অতিক্রম করেছি। এগুলো অতিক্রম করেও আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে।’

প্রধানমন্ত্রী রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে জাতির জন্য উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহযোগিতার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামফলক উšে§াচন করেন এবং শান্তির প্রতীক ১৩২০টি পায়রা অবমুক্ত করেন এবং প্ল্যান্টের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম ঘুরে দেখেন।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়ে দেশে শতভাগ দূষণমুক্ত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় এবং সারা বিশ্বে ১১তম দেশ।

পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটি ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়, ৪০০ কেভি পায়রা-গোপালগঞ্জ পাওয়ার ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয়টি গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও আরেকটি পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ চলছে এবং সরকারের আরও একটি ১৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং এখানে পায়রায় একটি সোলার সিস্টেম পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

প্ল্যান্টটি তৈরি করছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল), চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল)-এর মধ্যে একটি ‘ফিফটি-ফিফটি’ যৌথ উদ্যোগ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড এবং এনইপিসি এবং সিইসিসি-এর কনসোর্টিয়াম পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের জন্য ২৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে ইপিসি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।