নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনির অন্তত একজনকে মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমি ওয়াদা করছি, মুজিববর্ষের মধ্যে আরও একজন খুনিকে দেশে এনে শাস্তির মুখোমুখি করব। এটা এখন জনগণেরও প্রত্যাশা।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তীকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ছাড়া পেয়ে যায়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ায় বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার শেষে ২০১০ সালে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ গত এপ্রিলে পলাতক আবদুল মাজেদ ধরা পড়লে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়।
তবে দণ্ডিত পাঁচ খুনি এখনও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন। তারা হলেনÑআব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী। তাদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরীর কানাডায় অবস্থানের খবর সবার জানা। তাদের ফেরত পাঠাতে বহু বছর ধরেই দুই দেশের সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনির ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছয়জনকে দেশে এনে শাস্তির সম্মুখীন করেছি। একজন তো আগেই মারা গেছে। বাকি পাঁচজনের মধ্যে আই মাস্ট সে, আমাদের প্রার্থনা ছিল যে মুজিববর্ষের মধ্যে অ্যাট লিস্ট একজনকে দেশে এনে বিচারের সম্মুখীন করা।’
রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে দেশে আনার প্রক্রিয়া ‘বেশ এগিয়েছে’ বলে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচজনের মধ্যে দুজনের ঠিকানা আমরা জানি। এটার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। কিছুটা অগ্রসর হয়েছি। আগে তো কথাই শুনতে চায়নি, এখন কথা শুনছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী পলিটিকো গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় হারাতে পারে এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
সেই প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইমিগ্রেশন পেয়েছিল, এখন সেটা রিভিউ হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, আরেকজনকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে পারব। আরেকজনের (নূর চৌধুরী) বিরুদ্ধে আমরা কেস করেছিলাম। কেসে আমরা জয়লাভ করেছি। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে সে দেশের আইনের কারণে যে দেশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সে দেশে তারা পাঠাবে না তাকে, সে কারণে তারা এখনও আটকে রেখেছে।’
রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে দেশে আনতে দেশে-বিদেশে জনমত গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি এটার জন্য সব বাংলাদেশি, প্রবাসী বাংলাদেশি ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধ করছি, আপনারা একটা সিগনেচার ক্যাম্পেইন করেন। আমরা যদি কয়েক লক্ষ কোটি লোকের সিগনেচার সংগ্রহ করতে পারি, আমেরিকার জন্য, কানাডার জন্য, তাহলে আমি সিগনেচার সংগ্রহ করে ওই সরকারকে বলব যে দেখো, এত লোক খুনির বিচার চায়। তাতে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী হয়। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগে যদি কয়েক লাখ সিগনেচার মুখোমুখি সংগ্রহ করতে পারি, তাহলে ইস্যুটা আরও শক্তিশালী হবে। আমি সরকারিভাবে চেষ্টা করছি, এখন আপনাদের… জনতার সাহায্য চাই।’
প্রবাসীদের মধ্যে জনমত গড়ে উঠলে কানাডার নাগরিকরাও সে দেশ থেকে খুনিকে বিতাড়িত করতে ‘আন্দোলন শুরু করবেন’ বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দণ্ডিত আরেক খুনি মোসলেম উদ্দিন সম্প্রতি ভারতে ধরা পড়েছেন বলে সেদেশের গণমাধ্যমে খবর এলেও তার সত্যতা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। রশীদ ও ডালিম কোথায় আছেন, সেই সন্ধান এখনও পাননি দেশের গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ঘটনার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন।
শুক্রবারের আলোচনায় যোগ দিয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। কোনো লাভ নেই। সামনে উপনির্বাচন আছে। আপনাদের জনমত যাচাই করে দেখেন। সেখানে দেখবেন, জনগণ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকেই চায়।’
‘জনতার প্রত্যাশা’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ওই সংগঠনের সভাপতি এমএ করিম।