মুদ্রানীতি ঘোষণা ১৫ জানুয়ারি, অগ্রাধিকার পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ বিবেচনা নিয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বরাবরের মতোই নতুন মুদ্রানীতিতে অগ্রাধিকার দেয়া হবে মূল্যস্ফীতি। এজন্য মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা আরও সংকোচনমুখী করা হচ্ছে। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ আরও কমে যেতে পারে। এতে ঋণের সুদহার আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

গতকাল রোববার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আগামী ১৫ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। ২০২৩ সালে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ছিল, পুরো বছরই তা মোকাবিলার চেষ্টা করে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কিছু অর্জনও ছিল। চলতি হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে এনেছি। সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। নতুন টাকা সৃষ্টি করে সরকারকে ঋণ দেয়া বন্ধ করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। তাই বলা যায় ২০২৩ সাল পুরো বছর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ই গেছে।’

তিনি আরও বলেন, মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, আশা করা যাচ্ছে নতুন বছরের জুনে তা ৬ বা ৮ শতাংশে নেমে আসবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটা ইতিবাচক ধারায় এসেছে। নতুন সরকার এলে তা আরও শক্তিশালী হবে। রিজার্ভ শক্তিশালী হলে বৈশ্বিক সংকট অনেকটাই ধীরে ধীরে কেটে যাবে। অন্যদিকে আগামী জুনে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। তাই আমরা আশা করছি, যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা পড়েছি, নতুন বছর তা উত্তরণের মাধ্যমে একটা ভালো অবস্থানে যেতে পারব।

করপোরেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করার বিষয়ে নতুন বছরও অব্যাহত থাকবে বলে জানান মুখপাত্র। তিনি বলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স নিয়ে কাজ শুরুকরেছি। তা নতুন বছরও অব্যাহত থাকবে। আমানতকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো পদক্ষেপ নেবে। কারণ আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দেয়াই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল নীতি।

জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় ভাগের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করার লক্ষ্যে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মতামত ও পরামর্শ চেয়েছে। এছাড়া গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটি পুনর্গঠন করেছে। আগে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই কমিটিতে ছিলেন; এবারের কমিটিতে বাইরে থেকে আরও তিনজনকে রাখা হয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুদ্রানীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা, যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও মুদ্রানীতির অন্যতম কাজ। বছরে দু’বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৮ জুন চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের আগে মুদ্রানীতি পলিসি কমিটি নিজেরা একাধিকবার বৈঠক করে স্বাধীনভাবে উপকরণগুলো ঠিক করে থাকে। এ ক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া ছাড়াও অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নেয়া হয়। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে চলতি অর্থবছর থেকে মুদ্রানীতির পরিচালন কাঠামোতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। মুদ্রানীতি কাঠামোতে সুদহারের করিডর প্রথা চালু করা হয়েছে। এর আওতায় সুদহার টার্গেটিং মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ মুদ্রানীতির অপারেটিং টার্গেট বা টুলস হিসেবে সুদের হারকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাজারে অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।