মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেশের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ শেয়ার ও ইউনিটদর। একইভাবে ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে সূচক। বিশেষ করে লকডাউনে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। সবমিলে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক স্থিতিশীলতা ফিরছে এবং ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে এমন মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এমনটি ভেবে মুনাফায় থেকেও হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করছেন না অনেক বিনিয়োগকারী।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভালো মুনাফায় থেকেও তারা শেয়ার বিক্রি করছেন না। এসব বিনিয়োগকারীদের ধারণা পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ারগুলোর দর ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। একবার হাত ছাড়া করলে এসব শেয়ার আবার কম দরে কেনা সম্ভব নয় বলেও জানান তারা।
জানতে চাইলে রাকিব হাসান নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, আমি একটি কোম্পানির শেয়ার তিন টাকা দরে কিনেছি। এখন সে শেয়ারদর ছয় টাকার কাছাকাছি। প্রায় ১০০ শতাংশ লাভ থাকার পরও কেন শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলছেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ শেয়ারদর ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। আর একবার হাত ছাড়া করলে এগুলো আর কাক্সিক্ষত দরে কেনা সম্ভব না। জানা যায়, বিনিয়োগকারীরা যে সব শেয়ার হাত ছাড়া করতে চাইছেন না তার বেশিরভাই ১০ টাকার নিচে দর থাকা শেয়ার।
এদিকে এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরছে, এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার। এ কারণে ব্যক্তিশ্রেণী ও প্রাতিষ্ঠানিক- দুই ধরনের বিনিয়োগকারীই বাজারে আসছেন। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও আসছে। অর্থাৎ সব ধরনের বিনিয়োগকারী বাজারমুখী হচ্ছেন। যদিও তাদের বেশিরভাগ লেনদেন হচ্ছে ফোনের মাধ্যমে। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বাসায় বসে লেনদেন করছেন। কারণ লকডউনে শর্ত দেয়া হয়েছে বিনিয়োগকারীরা যেন হাউসে না আসেন (যদিও বিশেষ কারণে কেউ কেউ হাউসে আসছেন)। তাদের ঘরে বসে অনলাইনে লেনদেন করতে বলা হয়েছে। ফলে এখন সিংহভাগ লেনদেন হচ্ছে অনলাইনে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন পুঁজিবাজারে এখন যে পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে মনে হচ্ছে বাজার আরও ভালো হবে। তবে যারা মুনাফা না তুলে অধিক লাভের আশায় বসে রয়েছেন তাদের প্রত্যাশা উল্টোও হতে পারে। কারণ বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ মুনাফা তুলে নেয়া। অধিক লাভের আশায় বসে থাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য সর্বনাশের কারণও হতে পারে।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, নতুন কমিশন আসার পর থেকে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে। এখনও বাজারের সিংহভাগ শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায়। বিনিয়োগকারীরা দেখে শুনে বিনিয়োগ করলে এখান থেকে ভালো মুনাফা পেতে পারেন। তবে যারা অধিক লাভের আশায় বসে রয়েছেন তারা ঠিক করছেন না। কারণ যে কোনো দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে। পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক নিয়মই এটা।
একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো। বিএসই কর্তৃপক্ষও বাজার নিয়ে কাজ করছেন। মূলত সে কারণেই বাজার পরিস্থিতি বদলেছে। তবে পুঁজিবাজারের যে কোনো পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
একই প্রসঙ্গে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজার যাতে ভালো থাকে, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে বাজার ভালো থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা দরকার। এটা কারও একক প্রচেষ্টায় হবে না। এজন্য দরকার সবার সহযোগিতা। সবার সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে পুঁজিবাজার আরও ভালো থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজার আশানুরূপভাবে কখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যদিও এর জন্য বাজার পরিস্থিতি ও দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে দায়ী করেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য আগের কমিশনকেও দায়ী করা হয়। তবে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে।